বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫ ৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
সব শংকা উড়িয়ে বল হাতে ম্যাশের বাঘের মতো ছুটে চলা, নিজের কষ্ট, ব্যাথা নিজের মধ্যেই রেখে দেশের জন্য লড়ে যান ক্রিকেট যুদ্ধে
আরেকটি ট্রফি উচিয়ে ধরার অপেক্ষায় ম্যাশ
এই সাফল্যের রেসিপি কী? সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা কী এবারো থাকছে? প্রথমের সঙ্গে নিজের নামটা খোঁদায় করে রেখেছেন মাশরাফি তা অমোচনীয় হয়েই জ্বলজ্বল করবে ততদিন, যতদিন টিকে রইবে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
জাহিদ হাসান মাহা
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৩:৩৬ PM আপডেট: ১৫.০২.২০২৩ ৩:৫১ PM
জীবনী গ্রন্থে বিশ্বকাপ নিয়ে লেখার মতো অনেক অধ্যায় আছে মাশরাফির। মাশরাফি রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর থেকেই একটা প্রশ্ন তাকে হরদম শুনতে হয়েছে-তাহলে ক্রিকেট ছাড়ছেন কবে? পরিস্কার কোন উত্তর দেননি মাশরাফি। শুধু আলতো হেসেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা বড় অধ্যায় মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওই অধ্যায়ের একটা বড় চ্যাপ্টার অধিনায়ক মাশরাফি।বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা নড়াইল-এ মাশরাফির জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তিনি বাঁধাধরা পড়াশোনার পরিবর্তে ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন, আর মাঝে মধ্যে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটা।

তারুণ্যের শুরুতে ক্রিকেটের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে, বিশেষত ব্যাটিংয়ে; যদিও এখন বোলার হিসেবেই তিনি বেশি খ্যাত, যেজন্যে তাকে 'নড়াইল এক্সপ্রেস' নামেও অভিহিত করা হয়। ৮ নভেম্বর, ২০০১ এ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। একই ম্যাচে খালেদ মাহমুদেরও অভিষেক হয়। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থেকে যায়। মাশরাফি অবশ্য অভিষেকেই তার জাত চিনিয়ে দেন ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়ে। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন তার প্রথম শিকার। মজার ব্যাপার হল, মাশরাফির প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচও ছিল এটি। তিনি এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী ৩১তম খেলোয়াড় এবং ১৮৯৯ সালের পর তৃতীয়।

একই বছর ২৩শে নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সাথে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সাথে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে বাগিয়ে নেন ২টি উইকেট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত তৃতীয় টেস্ট খেলার সময় তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এর ফলে তিনি প্রায় দু'বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে বাধ্য হন। ইংল্যন্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলায় তিনি সফলতা পান। ৬০ রানে ৪ উইকেট নেয়ার পর আবার তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এ যাত্রায় তিনি প্রায় বছরখানেক মাঠের বাইরে থাকতে বাধ্য হন।

সিলেট রয়‌্যালস, সিলেট সুপার স্টার্স, সিলেট সিক্সার্স, সিলেট সানরাইজার্স হয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স। বিপিএলে সিলেটের কতো নাম! কতো পরিবর্তন! কতো হাতবদল! বারবার মালিকানা বদলে এখনো থিতু হতে পারেনি দুটি পাতার একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। থিতু হতে পারেনি মাঠের পারফরম্যান্সও। তাতে বারবার সিলেটবাসীর হৃদয় ভেঙেছে। নিজেদের মাটিতে বিপিএল আয়োজন করে তবুও তাদের পথচলা একেবারেই বিবর্ণ। তবে এবার জাদুকরের হাতে পড়ে সিলেট দলটা নিজেদের গড়ে তুলছে নতুন করে। তিন বছরের জন‌্য সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিকানা কিনেছে ফিউচার স্পোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। দলটির আইকন ক্রিকেটার করা হয়েছে ওয়ানডের মতো বিপিএলেও সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। বিপিএলের চারবারের চ‌্যাম্পিয়ন অধিনায়কের হাত ধরেই অপ্রতিরোধ‌্য দলটি। শিরোপা থেকে তারা মাত্র এক পা দূরে। বৃহস্পতিবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে সিলেটের ফাইনাল ম্যাচ। ২২ গজে শান্ত-হৃদয়-সাকিব-মাশরাফিদের আরেকটি ভালো দিনে সিলেটের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে। অধিনায়ক মাশরাফি কথা দিয়েছেন, শতভাগের চেয়ে বেশি দিয়ে ফাইনাল ম‌্যাচটি জিততে চাইবেন। 

বিপেএলে মাশরাফির সাফল্য : ২০১২ সাল বিপিএলের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স। চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০১৩ সাল বিপিএলের দ্বিতীয় আসরেও শিরোপা অক্ষুন্ন রাখলো ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স। এই চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কও মাশরাফি। ফিক্সিং কেলেঙ্কারির জন্য পরের দুই মৌসুমে বিপিএল মাঠেই গড়ালো না। তৃতীয় আসরে ২০১৫ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজা ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স ছেড়ে যোগ দিলেন বিপিএলের নতুন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিপিএল অভিষেকেই সেবার চ্যাম্পিয়ন। এই দলের অধিনায়কও মাশরাফি বিন মতুর্জা। অর্থাৎ প্রথম তিন বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি মানে মাশরাফি বিন মর্তুজা। চতুর্থবার এসে বিপিএলের অন্য রূপ দেখলেন মাশরাফি। সেবার ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক হিসেবে বিপিএল জিতলেন সাকিব আল হাসান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি মর্তুজা ফাইনাল থেকে দুরে দাড়িয়ে হাততালি দিয়ে সাকিবকে অভিনন্দন জানালেন।  ২০১৭ সাল বিপিএলের পঞ্চম আসর। মাশরাফি এই মৌসুমে দল বদল করলেন। নাম লেখালেন রংপুর রাইডার্সে। টুর্নামেন্টের শুরুটা তেমন ভাল হয়নি মাশরাফির রংপুরের। কিন্তু শেষ হাসিটাও যে তিনিই হাসলেন। ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে রংপুরই চ্যাম্পিয়ন হলো। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে- বিপিএলের আসরে চারবারই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি উঠেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার হাতে!

তাও আবার তিন দলের হয়ে। যখনই প্রথমবারের মতো যে দলের নেতৃত্ব নিয়েছেন; সেই দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। -এই সাফল্যের রেসিপি কী? সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা কী এবারও থাকছে? একটা টুর্নামেন্ট বাদ দিলে বিপিএল এলেই প্রতিবারই একই রকম চাপ নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে হয় আমাকে; অনেকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এবারো সেই শিরোপা ধরে রাখতে হবে। নতুন টুর্নামেন্টে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলের সবসময়ে একটা চাপ থাকেই। এই ফরমেটে খুব ভাল দল করলেও যে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যাবে-এমন কোন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। এখন প্রথম ম্যাচ থেকে আমাদের খুব ভালভাবে শুরু করতে হবে। হয়তো শুরুটা খারাপও হতে পারে। তবে ফিরে আসার মানষিকতা রেখেই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। বিপিএলের এতগুলো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলাম, সত্যিকার অর্থে বলতে কী এই সাফল্যের জন্য নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট কোন রেসিপি, ফর্মুলা নেই। তবে হ্যাঁ, অনেক জায়গা থেকে অনেক খেলোয়াড় এসে দলে যোগ দেয়। সেজন্য টুর্নামেন্টের পুরোটা সময় জুড়ে খেলোয়াড়দের মধ্যে বন্ডিংটা (বন্ধন) অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।’ অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি পুরো দলের মধ্যেই এই বন্ধনের মায়াজাল খুব চমৎকার কায়দায় তৈরি করতে পারেন। যখন বাংলাদেশের গর্বের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে খেলেন, তখনো; আবার যখন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নামেন-তখনো সেই চিরচেনা অধিনায়ক মাশরাফি।

তার উপস্থিতিই বদলে দেয় পুরো দলকে। বলা হয়ে থাকে দল ভালো তো অধিনায়ক ভালো। তবে প্রসঙ্গ যখন বিপিএল তখন ক্রিকেটীয় সেই বাক্য কিছুটা বদলে দিতে হচ্ছে-‘মাশরাফি অধিনায়ক মানেই দল চ্যাম্পিয়ন!’ সিলেটের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি আগে কখনও যা করতে পারেনি, এবার তা করে দেখাল সিলেট স্ট্রাইকার্স। দারুণ ছন্দে থাকা রংপুর রাইডার্সকে দ্বিতীয় এলিমিনেটরে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে মাশরাফীর দল। সিলেটের এমন সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে নড়াইল এক্সপ্রেসের। পঞ্চমবারের মতো বিপিএল ফাইনাল খেলতে যাচ্ছেন মাশরাফি। সিলেটের জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন মাশরাফি। সেখানে তার কাছে অধিনায়কত্বের ম্যাজিক সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি হাসির সুরে বললেন, ‘আমার কোনো ম্যাজিক নেই। সবই আল্লাহর রহমত। ফাইনালে প্রতিপক্ষ আমাদের চেয়ে অনেক অনেক ভালো দল। এর মানে এই নয় যে আমরা ভালো খেলতে পারব না। আমি আশা করি, দলের সবাই আরও একটা ম্যাচ ভালো খেলবে।’ রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের কৃতিত্বটা তরুণ পেসার তানজিম হাসানকে দিয়েছেন মাশরাফি।

তরুণ এই পেসার মঙ্গবারের ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। মাশরাফি বলছিলেন, ‘আমরা জানতাম যে উডের একটা ওভার বাকি আছে। তাকিয়ে ছিলাম সাকিবের দিকে। সে ওই ওভারে যদি ৮ রানও দেয়, তাহলেও আমরা ম্যাচে থাকব। সে ওই সময় আউটস্ট্যান্ডিং বোলিং করেছে। তরুণ ছেলে। প্রথম বিপিএল খেলছে। ওর ওই ওভারের জন্যই আমরা ম্যাচে ফিরতে পেরেছি।’ ফাইনালের প্রতিপক্ষ নিয়ে ম্যাশ বলেন, ‘যদিও কুমিল্লা অনেক অনেক ভালো দল, এই টুর্নামেন্টের যে কোনো দল থেকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের সঙ্গে আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারব না। আমরা পুরো টুর্নামেন্টে যে স্বাভাবিক খেলা খেলে এসেছি, নিজেদের দিকে যদি মনোযোগ ঠিক রাখতে পারি, গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় যদি অবদান ঠিকমতো রাখতে পারি, তাহলে কেন নয়?

বাবু/জেএম

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  ট্রফি   ম্যাশ  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত