শুরুতেই দুঃস্বপ্ন! বাজেভাবে হেরে বসে টাইগাররা। বাঁচা-মরার ম্যাচে চূড়ান্ত ক্রিকেটীয় নৈপুণ্য দেখিয়ে এশিয়া কাপের শেষ চারের টিকিট নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের পরের পর্বে পা রেখেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের সামনে এই ম্যাচে আফগানদের শুধু হারানোই নয়, বড় ব্যবধানে ধরাশায়ী করার চ্যালেঞ্জ ছিল। মিরাজ-শান্তদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর তাসকিন-শরিফুলদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সে মিশনে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ।
সেই ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসদের দিয়ে শুরু। এখনও পাকিস্তান দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ শক্তিশালী পেস বিভাগ। বর্তমানে শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ ও নাসিম শাহ বিশ্বের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের মনেও ভয় ধরিয়ে দিতে সক্ষম। যার সর্বশেষ প্রমাণ ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সর্বশেষ ম্যাচেও মিলেছে। এশিয়া কাপের সুপার ফোরকে সামনে রেখে অনেকটা চোখ রাঙানি দিচ্ছে পাকিস্তান, তবে বাংলাদেশও কম না। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রয়েছে বিশ্বমানের বলার ও ব্যাটার। বাংলাদেশও প্রস্তুত পাকিস্তানকে রুখতে।
এদিকে বাংলাদেশ দলের জন্য বড় দুঃসংবাদ, চলতি এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণে আসরের বাকি অংশে আর খেলা হচ্ছে না এই বাহাতি ব্যাটারের। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে শান্তর ছিটকে যাওয়া নিশ্চিত করেছে। চলতি এশিয়া কাপে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন শান্ত। এখন পর্যন্ত ১৯৩ রান নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি। গ্রুপপর্বে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৯ রানের পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু চোট তাকে সুপার ফোরে খেলার আগেই আসর থেকে ছিটকে দিলো।
এদিকে শান্তর ছিটকে যাওযায় দলে আসতে পারে পরিবর্তন, অপরদিকে ওপেনিংয়েও আসতে পারে পরিবর্তন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরিবর্তন:
ওপেনিংয়ে নাঈম শেখের পরিবর্তে ব্যাট হাতে দেখা যাবে লিটন দাসকে
নাজমুল শান্তর জায়গায় খেলবে অভিজ্ঞ ব্যাটার এনামুল বিজয়
আগামীকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সুপার ফোরের প্রথম লড়াইয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ সামনে রেখে আশা দেখছে বাংলাদেশ আফগান ম্যাচের সেরা মিরাজের কথায় শুনা গেছে আশার বাণী, ‘প্রথম লক্ষ্য থাকবে সেরা দুইয়ে থাকার। ওই জায়গায় থাকলে আমরা ফাইনাল খেলতে পারব। সুতরাং লক্ষ্য এখন এটিই। সেই লক্ষ্যে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে আমরা এক ধাপ এগিয়ে যাব।
এর আগে এশিয়া কাপের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্ন’র মতই, প্রথম ম্যাচে লংকানদের বিপক্ষে বাজেভাবে হেরে বসে সাকিব বাহিনী। বাচাঁ মরার ম্যাচে পাকিস্তানের লাহোরে রোববার এশিয়া কাপ ক্রিকেটের গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়ে সুপার ফোর পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচটি লাহোরেই খেলবে টাইগাররা। আগামীকাল স্বাগতিক পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে সবাংলাদেশ।
তবে সুপার ফোরের তিনদল নিশ্চিত হলেও এখনো রয়ে গেছে জল্পনা-কল্পনা! আফগানদের হারানোর পর বাংলাদেশের নিট রান রেট দাঁড়িয়েছে (+) ০.৩৭৩। শ্রীলংকার (+) ০.৯৫১ আর আফগানিস্তানের (-) ১.৭৮০। আজ লাহোরে শ্রীলংকা ও আফগানিস্তান ম্যাচের ফল যা-ই হোক না কেন, বাংলাদেশের সুপার ফোরে খেলা নিশ্চিত। শ্রীলংকাকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে আফগানিস্তান যদি সুপার ফোরে ওঠে, তবে শ্রীলংকা বিদায় নেবে। আগামীকাল শুরু হবে সাকিবদের সুপার ফোর পর্বের লড়াই। এটি সুপার ফোরে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ, এবারের আসরেও সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচ। সুপার ফোরে পাকিস্তানে এই একটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে। বাকি মাচগুলো হবে শ্রীলংকায়।
ফরম্যাট এমনভাবে করা হয়েছে, যেন ভারতের কোনো ম্যাচ পাকিস্তানে না পড়ে। গ্রুপের ফল যা-ই হোক না কেন, পাকিস্তান ‘এ-১’ ও ভারত ‘এ-২’ এবং শ্রীলংকা ‘বি-১’ ও বাংলাদেশ ‘বি-২’ হিসেবে সুপার ফোরে খেলবে। এই হিসেবে কাল লাহোরে ‘এ-১’ পাকিস্তান ও ‘বি-২’ বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে। ৯ সেপ্টেম্বর কলম্বোয় সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। কোনো অঘটন না হলে প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এদিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ জয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করার পর আরেকটা সুসংবাদ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। জ্বর থেকে সেরে ওঠায় দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন লিটন কুমার দাস।
একনজরে সুপার ফোরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ও ম্যাচের সূচি:-
৬ সেপ্টেম্বর- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান- লাহোর
৯ সেপ্টেম্বর- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা/ আফগানিস্তান- হাম্বানটোটা
১৫ সেপ্টেম্বর- বাংলাদেশ বনাম ভারত- হাম্বানটোটা
একনজরে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান
*এশিয়া কাপের কেবল একটি আসরে খেলেনি বাংলাদেশ। ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিযোগিতাটির উদ্বোধনী আসরে যে তিনটি দল ছিল তারা হলো ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ ১৯৮৬ সাল থেকে টানা অংশ নিয়ে যাচ্ছে।
* ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপে ৪৫ ম্যাচ খেলে ৮টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, হেরেছে বাকি ৩৭টিতে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে সাত ম্যাচে তিন জয়ের বিপরীতে টাইগারদের হার চারটিতে।
* শিরোপা জেতার স্বাদ না পেলেও তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। দুবার ওয়ানডে সংস্করণে (২০১২ ও ২০১৮ সালে) ও একবার টি-টোয়েন্টি সংস্করণে (২০১৬ সালে) রানার্সআপ হয়েছে তারা।
* সর্বোচ্চ পাঁচবার এশিয়া কাপের স্বাগতিক হিসেবে থেকেছে বাংলাদেশ। ১৯৮৮ সালে প্রথমবার প্রতিযোগিতাটির আয়োজক ছিল তারা। এক যুগের ব্যবধানে ২০০০ সালে ফের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে। এরপর টানা তিনটি আসরে (২০১২, ২০১৪ ও ২০১৬) স্বাগতিক ছিল তারা।
এশিয়া কাপ বিজয়ীদের তালিকা
১৯৮৪ সালে প্রথম এশিয়া কাপ আয়োজিত হওয়ার পর থেকে এখনো পৰ্যন্ত ওয়ানডে এবং টি২০ ফরম্যাট মিলে মোট ১৫বার এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি দল এশিয়া কাপ ট্রফি জিততে পেরেছে, এর মধ্যে ভারত সবথেকে বেশি ৭ বার, শ্ৰীলঙ্কা ৬ বার এবং পাকিস্তান ২ বার শিরোপা জেতার সুভাগ্য লাভ করেছিল।
এশিয়া কাপ ২০২৩ এ মোট ৬ দল ট্রফি জেতার জন্য একে অপরের সাথে লড়াই করবে। এর ৩টি দল করে দুটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে গ্রুপ ১ ভারত ও পাকিস্তান একই গ্রুপ এবং দ্বিতীয় গ্রুপ বাংলাদেশ ,শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানকে রাখা হয়েছে। নীচে আমরা দুটি গ্রুপ এর দলগুলোর নাম উল্লেখ্য করেছি।
আসন্ন এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপকে ঘিরে বেশ বড় স্বপ্ন আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে এবার শিরোপা জিততে চায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে শেষ মুহূর্তে সাকিবের অন্তর্ভূক্তির ফলে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন সকলে। এখন দেখার বিষয় কী হয়!
বাবু/জেএম