লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে মো. বাচ্চু মিয়া (২৯) নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালককে গাছের সাথে বেধে নির্যাতন ও টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার বাচ্চু মিয়া রামগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাতে পুলিশ ঘটনার মূল হোতা মো. সম্রাট মাহামুদ (৩৩) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।
সম্রাট উপজেলার ভাদুর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাদুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের সদস্য সৈকত মাহমুদের ভাই এবং নৌকার প্রার্থী ড. আনোয়ার হোসেন খানের কর্মী।
ফলে তাকে ছাড়িয়ে নিতে ওই রাতেই থানায় দুইঘণ্টা অবস্থান নেয় লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন খান। তদবির চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
পুলিশ অভিযুক্ত সম্রাটকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার (৩ জানুয়ারি) আদালতে সোপর্দ করে। ভুক্তভোগী বাচ্চু মিয়া ভাটরা ইউনিয়নের দল্টা গ্রামের মাহফুজুর রহমান ভূইয়ার ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাচ্চু মিয়া একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। গত ১ জানুয়ারি দুপুরে তিনি খালি সিএনজি নিয়ে রামগঞ্জ শহর থেকে বাড়ির দিকে রওনা হন। তিনি ভাদুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গেলে সম্রাট তার সহযোগী মো. আরমানসহ অজ্ঞাত কয়েকজন তাকে অপহরণ করে পাশ্ববর্তী একটি সুপারি বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে অভিযুক্তরা তাকে লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করে। তাকে ছেড়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। পরে বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ছাড়া পায় বাচ্চু মিয়া। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নেন তিনি।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) থানায় মামলা করেন বাচ্চু মিয়া। পরে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে ছাড়িয়ে নিতে প্রভাবশালীরা তদবির শুরু করে। এ সময় ভাদুর ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভার দুইজন কাউন্সিলর ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে থানায় তদবির করতে দেখা গেছে। রাত ১০ টার দিকে থানায় যান সংসদ সদস্য ড. আনোয়ার খান৷ রায়পুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলায়মানের সাথে প্রায় দুইঘণ্টা বৈঠক করে তাকে ছাড়িয়ে নিতে পারেননি তিনি।
ভূক্তভোগী বাচ্চু মিয়া বলেন, আমাকে পিটিয়ে পুরো শরীরে জখম করা হয়েছে। দুপুর ১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত আমাকে নির্জন বাগানে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছি।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর সার্কেল) আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী বলেন, বাচ্চু মিয়াকে নির্যাতনের অভিযোগে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার তদবিরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন সকলের জন্য সমান। অপরাধ করলে আইনের আওতায় আসতে হবে। এমপি মহোদয় তাকে ছাড়িয়ে নিতে আসেন নি। উনি এমনিই এসেছেন।