শষ্য ভান্ডার খ্যাত খুলনার দাকোপে গত বছরের তুলনায় এবছর অনেক কম জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবে সেচের মিষ্টি পানির চরম সংকটের কারণে তরমুজের ফলন অনেক কম হলেও কিছু কৃষকরা দাম পেয়েছেন বাম্পার।
আবার কিছু কৃষক আংশিক লাভবান হলেও এখনো অনেক কৃষক ফল বিক্রিতে পড়েছেন বিপাকে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গড় হিসাব মতে প্রায় ২১৪ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভবনা। এ তরমুজ খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হচ্ছে। এদিকে ফেরী ও খেয়াঘাটে মাত্রারিক্ত টোল আদায়ে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর বা ৪২ হাজার ৭৫০ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।
গত বছর চাষ হয়েছিলো ৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বোরো ধান ৩৫০ হেক্টর, সূর্য্যমুখি ১৮৮ হেক্টর, ভূট্টা ১৬ হেক্টর, বাঙি ৩৫ হেক্টর, তিল ৩ হেক্টর, মুগডাল ৪ হেক্টর, গম ২ হেক্টর ও অন্যান্য শাক সবজি ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। তা ছাড়া পতিত রয়েছে ১৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমি। তবে প্রচন্ড খরা ও বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎস খাল ও পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তরমুজ ক্ষেতে চরম সেচ সংকটে পড়েন এলাকার কৃষকরা। চাষের মাঝের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় সেচ সংকট কিছুটা লাঘব হয়। এতে তরমুজের ফলন কম হলেও অল্প কিছু সংখ্যক কৃষক বাম্পার দাম পেয়ে হয়েছেন লাভবান। কৃষকদের অভিযোগ স্থানীয় দালাল, ফড়িয়া ও পরিবহন সিন্ডিকেট, ফেরীঘাটে যানযটে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন এবং ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায় না হলে আরো দাম বৃদ্ধি হতো বলে অনেকে মনে করেন।
সাহেবের আবাদ এলাকার কৃষক সুকল্যান রায় জানান, তিনি এবছর ৬ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এক বিঘার খেত প্রচন্ড খরায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তার ৩৩ শতকের বিঘা প্রতি নিম্নে ৩০ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট খরচ হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রথমে দালালের কারণে ব্যাপারীরা খেতের দাম বলে মাত্র দেড় লাখ টাকা। এতে সে খেত বিক্রি করতে খুবিই বিপাকে পড়েন। পরে দালাল প্রতিহত করে সেই খেতের মাল বাহিরের মোকামে নিয়ে তিনি ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করে হয়েছেন আংশিক লাভবান। তবে এবছর তরমুজ চাষে কৃষকদের প্রতি পদেই বিঘ্ন ঘটেছে। প্রথমত প্রকৃতি চাষিদের প্রতিকুলে মার্চ মাস অর্থাৎ চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ছিলো। তা ছাড়া বীজের মান ছিল খুবই নিম্ন মানের এবং হরেক রকমের ভেজাল।
অন্যদিকে অসাধু সার, বীজ, কীটনাশক বিক্রেতা ও মৌসুমীক্রেতা এবং স্থানীয় দালাল ও ব্যাপারীদের সিন্ডিকেটে প্রতারনার শিকার হচ্ছেন চাষিরা। যে কারণে কৃষকদের খরচও বেড়েছে। এখনো পর্যন্ত দালালের কারণে অনেক কৃষক খেত বিক্রি করতে পারেনি। আবার অল্প কিছু সংখ্যক কৃষক প্রথমদিকে তরমুজ বিক্রি করে বাম্পার দাম পেয়ে হয়েছেন লাভবান। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে হয়তো এই সম্ভাবনাময় কৃষি তলানিতে ঠেকবে। তরমুজ চাষিদের বাঁচাতে হলে প্রথমত সরকারি পিষ্ট পোষকতায় হিমাগার তৈরী, রাস্তা ও ফেরীর উন্নয়নে উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বক্ষনিক মনিটরিং এবং উপজেলা কৃষি কমিটির মাধ্যমে তরমুজের দাম নিশ্চিত করে দালালমুক্ত ক্রেতাদের অবাধ চলা চল ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তারমত একই অভিমত ব্যক্ত করেন কৈলাশগঞ্জ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য কৃষক সিন্ধু রায়সহ আরো অনেকে।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর তরমুজের ফলন অনেক কম হয়েছে। কিন্তু সেচের মিষ্টি পানির সংকট হলেও এলাকার কিছু সংখ্যক কৃষক দাম পেয়েছেন ভালো। তবে এবছর তরমুজ আকারে ছোট হলেও গড় হিসাব অনুযায়ী এভারেজ প্রতি বিঘা ৫০ হাজার টাকা ধরলে ২১৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১০৬টি খাল খননের প্রস্তাব মন্ত্রালয় পাঠানো হয়েছে। খালগুলো খনন হলেও কৃষকদের সেচ সংকট কিছুটা লাঘব হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে গত কয়েক দিন আগে পোদ্দারগঞ্জ খেয়াঘাট থেকে এক আদায়কারীকে ভ্রাম্যমান আদালতে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা নিলে আবারও তিনি আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।