ভারতের সাতটি প্রদেশ-অরুণাচল,মেঘালয়, মণিপুর,মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, আসাম এবং ত্রিপুরা জাতিগত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের কারণে একত্রে সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত।
আর এ সেভেন সিস্টার্সের অন্যতম প্রবেশদ্বার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর। তবে ভারতীয় ভিসা জটিলতাসহ নানা কারনে সদ্য সমাপ্ত (২০২৩-২৪) অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় যাত্রী পারাপার কম হলেও বেড়েছে ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব আদায়।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের তথ্যমতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার হয় ২ লাখ ৬০ হাজার ৬৬ জন। এসময় ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৭ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আর সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর ব্যবহার করে যাত্রী পারাপার হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৯ জন। এতে করে সরকার ভ্রমণকর হিসেবে রাজস্ব পেয়েছে ১৩ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা।২৩-২৪ অর্থবছরে ভ্রমণকর পাঁচশত টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করেছে সরকার।
বন্দরের অভিবাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থলপথে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম আখাউড়া স্থলবন্দর। ভৌগোলিক অবস্থানের ফলে এ বন্দর ব্যবহারে দিনদিন যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ছে।
মূলত বন্দর পার হলেই ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহর। আর শহর থেকে খুব কাছেই বিমানবন্দর ও রেলওয়ে স্টেশন। ফলে সম্ভবাবনাময় আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতগামী যাত্রীদের আগ্রহ রয়েছে।কিন্তু আগরতলা স্থলবন্দরের অলিখিত কিছু পলিসির কারণে যাত্রী পারাপার কিছুটা কমেছে।
যেমন ভ্রমণ ভিসায় ৩০ দিনে একবার ও ব্যবসায় ভিসায় ৭ দিনে একবার ভারতে ঢোকার নতুন নিয়ম বেঁধে দিয়েছে আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তবে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুই দেশের স্থলবন্দর কতৃপক্ষের এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।এতে করে তাদের বেঁধে দেওয়া নিয়ম কিছুটা শিথিল করেছে। এতে করে যাত্রী পারাপার বাড়বে বলে আশা করছে অভিবাসন কতৃপক্ষ। তবে যাত্রীর বলছে ভারতীয় ভিসা জটিলতা একটি বড় সমস্যা। ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ভিসা পেতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগায় দুই দেশের মধ্যে যাত্রী যাতায়াত কমে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা খোকন সূত্রধর বলেন ত্রিপুরার সাথে আমাদের আত্মীয়তার বন্ধন। আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছে। প্রায় সময় আমাদের যাতায়াত করতে হয়। বর্তমানে ভিসা আবেদন করে জমা দিয়ে ভিসা পেতে প্রায় তিন সাড়ে তিন মাস সময় লেগে যায়। তার উপর ১ মাসের আগে যেতে চাইলেও যাওয়া যায় না।
কুমিল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান, চট্টগ্রামের বাসিন্দা ফয়সালসহ একাধিক যাত্রী বলেন, ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করার দেড় মাস পরে পাসপোর্ট জমা দিই ভিসা অফিসে। আর ভিসা পাই তার এক মাস পর। ভারতীয় ভিসা পেতে এত সময় লাগলে কি করবো বলেন। আমরা চাই দুই দেশের সরকার আলোচনার মাধ্যমে দ্রত বিষয়টি সমাধান করুক। যাতে করে আবেদনের ১০/১৫ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া যায়।
আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ খাইরুল আলম বলেন, সম্ভবাবনাময় আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতগামী যাত্রীদের আগ্রহ রয়েছে।কিন্তু আগরতলা স্থলবন্দরের অলিখিত কিছু পলিসির কারণে যাত্রী পারাপার কিছুটা কমেছে।
যেমন ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশী নাগরিকরা একই দিনে ফেরত আসতে না দেওয়া, ৩০ দিনে একবার ও ব্যবসায় ভিসায় ৭ দিনে একবার ভারতে প্রবেশের নতুন নিয়ম বেঁধে দিয়েছে আগরতলা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তবে গত মে মাসের ১৪ তারিখে আগরলা স্থলবন্দরে ভারত-বাংলাদেশ ৫ম সমন্বয় মিটিং অনুষ্টিত হয়। মিটিংয়ে আখাউড়া ইমিগ্রেশন এর কর্তৃপক্ষ উক্ত বিষয়টি উত্থাপন করলে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমানে তাদের বেঁধে দেওয়া নিয়ম কিছুটা শিথিল করেছে। এতে করে যাত্রী পারাপার বাড়বে বলে আশা করছি।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর আখাউড়া। ভৌগোলিক অবস্থানের ফলে এ বন্দর ব্যবহারে দিনদিন যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ছে। এ অর্থবছরে যাত্রী পারাপার কিছু কম হলেও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এখন ঢাকা থেকে মাত্র আড়াই ঘন্টায় ট্রেনে করে আখাউড়া পৌঁছানো যায়। তাছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে রেল ও সড়ক পথে যাতায়াত সহজ ও অর্থ সাশ্রয়ী হওয়ায় যাত্রীরা অন্য বন্দর ও আকাশ পথ ব্যবহার না করে আখাউড়া দিয়ে চলাচল করছে। এই স্থলপথ হবে যাত্রীদের প্রথম পছন্দ।