রবিবার ২২ জুন ২০২৫ ৮ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ২২ জুন ২০২৫
বস্তায় আদা চাষে খরচ কম লাভ বেশি
লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪, ৩:০৪ PM
আদিকাল থেকে আদা চাষ হয়ে আসছে মাটিতে।এমনটা ধারনা এলাকার মানুষের। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে ইদানিং দেশে কোথাও কোথাও বস্তায় আদা চাষ হলেও পাহাড়ী এলাকায় এ চাষ একেবারে নতুন। এবার বস্তায় আদা চাষ করে তাক লাগিয়েছেন বান্দরবানের প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক মোহাম্মাদ শফিকুল হক সুমন। বস্তায় হাজারো তরতাজা আদা গাছের উকিতে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক সুমন।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ছায়াযুক্ত জায়গায় আদার ছাষ ভালো হয়।পতিত জমি,বাড়ির আশপাশ এমনি কি বাড়ির ছাদেও বস্তায় আদা চাষ করা যায়। এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়। 

আদা চাষের জন্য সিমেন্টের বস্তা হলে ভালো হয়। বস্তায় আদা চাষের জন্য প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে ঝুরঝুরে করতে হবে। বস্তায় মাটি যাতে ফেঁপে থাকে সেজন্যে ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে। এরপর প্রতি বস্তায় তিন ঝুড়ি মাটি, এক ঝুড়ি বালি, এক ঝুড়ি পঁচা গোবর সার ও ২৫ গ্রাম ফিউরাডন মিশাতে হবে। পরিমাণমতো যোগ করতে হবে হাড়ের গুঁড়ো। বস্তার উপর থেকে ২-৩ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে মিশ্রণ দিয়ে বস্তা ভর্তি করতে হবে।

প্রতি বস্তায় বসাতে হবে ৭৫ গ্রামের একটি করে আদার কন্দ। সামান্য পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। বস্তার উপর ঢেকে দিতে হবে যাতে মাটিতে আর্দ্রতা বেশিদিন থাকে। এরপর দেখা যাবে অল্প দিনের মধ্যেই কন্দ থেকে গাছ বেরিয়ে আসছে। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে বস্তা প্রতি খরচ পড়ে ৩০-৪০ টাকা। প্রতি বস্তায় আদা পাওয়া যায় ১-৩ কেজি।

দেশের মসলার মধ্যে আদা একটি গুরুত্বপুর্ন ও দামী উপাদান। কৃষি বিভাগের পরামর্শে দামী এই মসলা চাষে দিনদিন আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক-কৃষাণিরা। আর সেই আদা বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে বান্দরবানের প্রত্যন্ত গ্রামে। 

লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি গ্রামের কৃষক সুমন এই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রাাথমিকভাবে ৬৫০০ বস্তা থাই জাতের আদা চাষ করেছেন। সেই বস্তায় তরতাজা আদা গাছ এখন বড় হয়েছে। বড় বড় আদা গাছ দেখে সুমনের হাসি ফুটেছে। স্বপ্ন দেখছেন লাভের। তবে বাহির থেকে ছাই কিনে আনা ও ছায়ার জন্য আদা গাছের উপরে শেট নির্মান করায় প্রতি বস্তায় ৭৫ টাকা করে ৬৫০০ বস্তায় ৪৮৮৮০০ টাকা খরচ পড়েছে। এ বছর ১০ লক্ষ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। 

সুমন জানান, বৈশাখ মাসের দিকে আমি আদা রোপন করি। এখন প্রতিটা বস্তায় আদার তরতাজা গাছ দেখে ফলন ভালো হবে বুঝা যাচ্ছে।মাঘ মাস আদা সংগ্রহের সময়। আশা করছি ৮-১০ টন আদা পাওয়া যাবে। বস্তা ছাড়াও মাটিতে ৩৫০০ বীজ রোপন করেছি।

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আশ্রাফুজ্জামান জানান, কেন্দ্রীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশনায় ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে জমিতে আদা চাষের পাশাপাশি বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় ও সম্প্রসারণ করতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই উপজেলায় এ বছর প্রায় ৮৫০০ বস্তায় আঁদা চাষ করা হয়েছে। আঁদা কিছুটা ছায়াপছন্দকারী ফসল হওয়ায় পাহাড়ের ঢালুতে ফলবাগান সমূহে বস্তায় আদা চাষকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে আবাদি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হবে পাশাপাশি বস্ত প্রতি গড়ে ৩০-৪০ টাকা খরচে সহজেই আঁদা চাষ করা যাবে। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত আঁদা বীজ লাগানো যায় এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আঁদা সংগ্রহ করা যায়। এ পদ্ধতিতে প্রতি বস্তায় ১-৩ কেজি পর্যন্ত আঁদা পাওয়া সম্ভব।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ হাসান আলী বলেন, বস্তায় আদা চাষের সুবিধা হচ্ছে বসত বাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবনাক্ত এলাকা, পরিত্যাক্ত জায়গা, বাড়ির ছাদে সহজেই চাষ করা যায়। একই জায়গায় বারবার চাষ করা যায়। উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়ে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে কন্দ পঁচা রোগ হয় না। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষরাই লাভবান বেশি হবে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত