দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক আজ প্রধান শিরোনাম করেছে, 'বদলে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা!'। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায় আরেকবার পরিবর্তন আসতে পারে।
প্রস্তাবিত নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারীরাই হবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে বিশ্ব জনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী, শিল্পীসমাজসহ যারা মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন তাদের 'যুদ্ধ সহায়ক' করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সর্বনিম্ন বয়সেও পরিবর্তন আসতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স হতে পারে ১৩ বছর। ২০২২ সালের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের মতে জামুকার আইনে কিছু দলীয় ন্যারেটিভ আছে। এটা নৈর্ব্যক্তিক একটা অবস্থান থেকে হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথম মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। সেই সংজ্ঞায় মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদেরই মুক্তিযোদ্ধা বলা হয়েছে। পরে ২০১৬ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এক গেজেটের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে ।
২০১৬ সালের ওই সংজ্ঞায় রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের পাশাপাশি বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী বাংলাদেশি নাগরিক, মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত, নির্যাতিতা বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলা-কুশলী, দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া মেডিক্যাল টিমের ডাক্তার, নার্স ও সহকারী, এমনকি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় মুক্তিযোদ্ধা বলা হয়েছে।
তবে নতুন খসড়ায় তাদেরকে 'যুদ্ধ-সহায়ক' নাম দিয়ে শ্রেণিভুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার এত বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও তালিকা চূড়ান্ত না করতে পারায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।