মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ ৩ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫
কক্সবাজারে নতুন আসা এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার জায়গা নেই ক্যাম্পে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫, ৪:০৩ PM
রাখাইন রাজ্যে সংঘাত, সহিংসতা ও খাদ্যসংকটের কারণে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা নাগরিকদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে। গত দেড় বছরে এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। তারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এ অবস্থায় ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকার জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে। 

এরই মধ্যে তাদের বসবাসের জন্য ঘর বরাদ্দ চেয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)। তবে সেই চিঠিতে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। ফলে ক্যাম্পগুলোতে গাদাগাদি করতে থাকতে হচ্ছে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গত দেড় বছরে এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসেছেন। ইতিমধ্যে তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে বসবাসের জন্য ঘর বরাদ্দ চেয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। গত সপ্তাহে আরআরআরসি কার্যালয়কে এ চিঠি দেয় ইউএনএইচসিআর। কিন্তু সেই চিঠির সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। 

এ অবস্থায় গত দেড় বছরে আসা রোহিঙ্গাদের নতুন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন গত বছরের জুন-জুলাই মাসে। চলতি বছরের প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছেন বলে জানা গেছে। যেকোনোভাবে অবশ্যই অনুপ্রেবেশ ঠেকাতে হবে।

আরআরআরসির অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে পালিয়ে এসেছেন এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা। ইতিমধ্যে তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন গত বছরের জুন-জুলাই মাসে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হলেও তাদের জন্য ঘর বরাদ্দের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘নতুন রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে বসবাসের জন্য ঘর বরাদ্দ দিতে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন। তবে সেই চিঠিতে সাড়া দেওয়ার পক্ষে নয় বাংলাদেশ। কারণ নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের বসতি দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তারা আপাতত যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে। আগের ক্যাম্পগুলোতে তাদের বসতি দেওয়া যায় কিনা তা বিবেচনায় রেখেছি আমরা। তবে এটি সমাধান নয়। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঠেকাতে পারলে প্রত্যাবাসন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে।’

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। নতুন আসা এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা এই হিসাবের বাইরে। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, রাখাইনে আরাকান আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) মধ্যে সংঘর্ষ, সংঘাত, সহিংসতার কারণে অনুপ্রবেশ বেড়েছে। গত কয়েক মাসে সেখানে খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে রাখাইন রাজ্যে বুথেডং গ্রামে রোহিঙ্গা যুবকদের জোর পূর্বকভাবে দলের যোগ দিতে বাধ্য করছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। আবার রোহিঙ্গাদের হত্যা, গুম, নির্যাতন, বিদ্রোহীদের মানবঢাল ও শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তাদের। এসবের কারণে অনুপ্রবেশ থামছে না। সবাই পালিয়ে থাকছে।

রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে টেকনাফের শালবন আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নেওয়া রোহিঙ্গা আবদুল গফুর বলেন, রাখাইনে আরসাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে আরাকান আর্মি আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে। ঘরবাড়ি দখল করে রোহিঙ্গাদের গ্রামছাড়া করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ধান-চালও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা পুরুষদের ধরে নিয়ে ব্যারাক নির্মাণকাজে বাধ্য করা হচ্ছে। ঘরে ঘরে খাদ্যসংকট চলছে। আবার বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় মাথাপিছু পাঁচ হাজার কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা, ১৮ কিয়াতে ১ টাকা) করে ঘুষ দিতে হয়েছে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত