শিগগির জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে ও অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য আবু হুরায়রা তানজিম পদত্যাগ করেছেন।
গতকাল শুক্রবার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগের বিষয়টি জানান। আবু হুরায়রা তানজিম নিকোশিয়া ফিলিপস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আমি দ্রুত জাতীয় নির্বাচনকে দেশের জন্য কল্যাণকর ভেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা সংগঠক কমিটির সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি নিয়ে সমালোচনা করে তিনি লেখেন, ‘আমরা জুলাই অভ্যুত্থানে সরাসরি জড়িত ছিলাম। সকল শ্রেণি-পেশার, রাজনৈতিক দল, অরাজনৈতিক ব্যক্তি, ছাত্রজনতার সমন্বয়ে হাসিনার পতন হয়েছে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি হয়েছিল কিছু পছন্দের মুষ্টিমেয় মানুষের সমন্বয়ে। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে যেমন প্রতিটা শ্রেণির লোক ছিল, হাসিনার পতনের ওপর গড়ে ওঠা এই সংগঠনে সকলে ছিল না।’
অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘দেশের অর্থনীতির এমনিতেই ভঙ্গুর অবস্থা। তার উপর আবার বিগত মাসগুলোতে বড় কোনো বৈদেশিক সংস্থাকে এ দেশে বিনিয়োগ করতে না দেখে আমরা অত্যন্ত হতাশ! হাসিনার পতনের পর সবার মুখে একটাই কথা, “সংস্কার”। একটা দেশ সংস্কারের পূর্বশর্ত হচ্ছে সেই দেশের অর্থনীতি ঠিক করা। আর অর্থনীতি ঠিক করতে হলে আপনার বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে, বিভিন্ন প্রজেক্টকে সংসদের মাধ্যমে বিল পাস করিয়ে নিতে হবে। যেগুলো একটা নির্বাচিত সরকার ছাড়া অসম্ভব। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্প কখনোই অস্থায়ী সরকার করতে পারবে না।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব তার সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দ্রুত একটি স্বচ্ছ জাতীয় নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবেন। এর মাধ্যমে দেশের জনগণ তার হারানো ভোটাধিকার ফিরে পারে। দেশে চলমান সব সংকট সমাধানের একমাত্র পথ এটাই। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দীর্ঘ ৯ মাস হলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হওয়া তো দূরের কথা, তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাটা এই সরকারের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া সরকার আওয়ামী লীগের বিচার করতে পারেনি, আহতদের পুনর্বাসন করতে পারেনি। এক কথায়, একটা অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের জনগণ হাজারো জীবন দানের পর যেই আশা-ভরসা নিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল তার এক ভাগও এই সরকার পূরণ করতে পারেনি। মানতে কষ্ট হলেও এটাই বাস্তব।’