পাহাড়ে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধিতে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থা রয়েছে।
কর্ণফুলি নদীর পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জলকপাট খুলে দেয়া হলেও তেমন উন্নতি হয়নি।
বন্যার পানিতে অনেক গ্রাম ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে, যার ফলে বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আটারকছড়া, ইয়ারংছড়ি, সোনাই, মালাদ্বীপ, কালাপাকুজ্যা, মাইনিুখ, গাথাছড়া, ছোট মাহিল্যা, গুলশাখালী, জারুলবাগান, ফোরেরমূখ ও ভাসান্যাদম ভাসছে বন্যার পানিতে। কিছু আশ্রয় কেন্দ্রও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও সংকটজনক করে তুলেছে। স্থানীয়রা ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তবে কিছু আশ্রয় কেন্দ্রও বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় এতে করে কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, গবাদি পশু নিয়ে কৃষকেরা পড়েছে বিপাকে। খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট চরমে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। ফলে লংগদু উপজেলার যোগাযোগ অচল হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, পানি বৃদ্ধির কারণে রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। দ্রুত পানি কমিয়ে দেয়ার দাবির জানান তারা।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাই জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে প্লাবিত এলাকার সাধারণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে। প্রশাসনের পক্ষ হতে ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় শুকনা খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ করছে উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী। এছাড়াও বন্যায় পানিবন্দি মানুষের পাশে দাড়িয়েছে লংগদু উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন।
লংগদু সেনা জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল আলীম চৌধুরীর নেতৃত্বে বন্যার্তদের সহায়তায় কাজ করছে সেনাবাহিনী।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) এসএম মান্না জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদের পানিবৃদ্ধির কারণে ৭৬৬টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৭ হাজার ৬১৮ জন মানুষ দুর্যোগে ক্ষতির শিকার হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। ৫৯টি মৎস্য খামার, ২০০টি গবাদিপশু ও ২৩৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে সেখানে ৯৭৯ আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৭০৫ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৬.৬৩ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, পানিবন্দি লোকজনের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা অনুযায়ী খাদ্যশস্যসহ ত্রাণ দেওয়া হবে।