কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ফুটেজ শেয়ার করে অনেকে দাবি করেন ‘চাঁদাবাজির ঘটনা’র লাইভ ভিডিও করায় সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যমও একই দাবি করে সংবাদ পরিবেশন করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদাবাজি নয়, এক যুবককে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় দুর্বৃত্তরা ওই সাংবাদিককে কুপিয়ে খুন করে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার ব্যস্ততম এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের ঈদগাহ মার্কেটে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও তুহিনের বন্ধু শামিম বলেন, আমরা এক সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি এক নারী এক ব্যক্তিকে নাজেহাল করছেন। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি সেই নারীকে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওই ব্যক্তিকে আঘাত করতে শুরু করে। ওই ব্যক্তি কোনোরকমমে দৌড়ে পালিয়ে যান। সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটি দেখে ভিডিও করা শুরু করেন। দুর্বৃত্তরা তা দেখে তাকে ধাওয়া দেয়। তুহিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু ওরা তাকে ধরে ফেলে। এরপর সবার সামনে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহতের বড় ভাই সেলিম ও স্থানীয়রা জানান, বাসন থানার চান্দনা গ্রামের শহীদ রওশন সড়ক এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তুহিন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন। এ সময় ৬/৭ জন যুবক ধারালো দা ও চাপাতি নিয়ে তাকে জনসম্মুখে ধাওয়া করে। তিনি প্রাণ রক্ষার জন্য দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ মার্কেটের চা বিক্রেতা খায়রুল ইসলামের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন। সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তার গলার কিছু অংশ কেটে যায়, শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
নিহত তুহিনের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা গেছে, চাঁদাবাজি সম্পর্কিত কোনো লাইভ ভিডিও বা কোনো রিপোর্ট তার আইডিতে নেই। তিনি চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি চান্দনা চৌরাস্তার এক মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেন। এতে লেখা রয়েছে ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য’।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য নেয় এবং আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে।