পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের চরশিবায় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে দক্ষিণ কপালবেড়া খলিফা বাড়ির সামনের চৌরাস্তায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন, চরশিবা ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস রাড়ী, সদস্য সবুজ রাঢ়ী, নূরনবী রাঢ়ী, হাসান রাঢ়ী, কুদ্দুস ব্যাপারী, ইয়াকুব রাঢ়ী, ওমর রাঢ়ী, রাহান রাঢ়ী ও সলেমান রাঢ়ী। তারা সকলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত।
অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের আহতদের মধ্যে রয়েছেন যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল খলিফা। আজমির খলিফা, শাহাবুল খলিফা, আমেনা বেগম, নাঈম খলিফা ও নবীন খলিফা। এরা গণ অধিকারের কর্মী সমর্থক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চরশিবা সাংগঠনিক ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে কমিটি গঠন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কপালবেড়া বাজারে গণঅধিকারের সভা ছিলো। সভায় বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে অংশ নেয়। অন্যদিকে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গলাচিপায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনের আগমনে রাতে শুভেচ্ছা মিছিল করে চরশিবা সাংগঠনিক ইউনিয়ন বিএনপি।
একদিকে সভা শেষ করে গণঅধিকার নেতাকর্মীরা ফিরছিল। অন্যদিকে মিছিল শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরাও বাড়ি ফিরছিল। পথে দক্ষিণ কাপালবেড়া চৌরাস্তা বাজারে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সভায় লোক উপস্থিত হওয়া নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। এসময় বিএনপির নমিনেশন হাসান মামুন পাবে না গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর পাবে এ বিষয় নিয়ে তাদের তর্ক হয়। একপর্যায়ে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
আহত যুবদল নেতা ইলিয়াস রাড়ী বলেন, শুক্রবার হাসান মামুন ভাইয়ের প্রোগ্রাম উপলক্ষে রাতে আমরা কপালবেড়া বাজারে শুভেচ্ছা মিছিল করেছি। মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার সময় গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা আমাদের লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। গণঅধিকার পরিষদের ওয়ার্ড কমিটি গঠন উপলক্ষে কপালবেড়া বাজারে তাদের সভা ছিল। সেই প্রোগ্রামে আমাদের লোকজনকেও তারা দাওয়াত করেছিল, কিন্তু আমি কাউকে সেখানে যেতে দেইনি। আমরা তাদের বলেছি, ৭ নভেম্বরের প্রোগ্রামে হাসান মামুন ভাই যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করবো। কিন্তু তারা বলে, হাসান মামুন নমিনেশন পাবে না, গণঅধিকারের নুরুল হক নুরকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। এই কথা বলেই তারা আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।
আহত আজমীরের মা আমেনা বেগম বলেন, আমার ছেলে মোটরসাইকেল চালক। কিছুদিন আগে বিএনপির সভায় গাড়ি নিয়ে যেতে বলছিল সে যায় নাই। কিন্তু আজ গণঅধিকার পরিষদের সভায় যায়। সভা শেষ করে বাসায় ফেরার পথে চৌরাস্তায় বিএনপির লোকজন তাকে ধরে মারধর করে। আমার বাসার সামনেই ঘটনা ঘটে। আমি ছেলেকে বাঁচাতে দৌড়ে গেলে আমাকেও মারধর করে। অন্যদিকে আজমীরের বাবা শাহাবুল খলিফা বলেন, আমরা গণঅধিকার পরিষদ করি। এর আগে চরবিশ্বাসে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের মারামারির ঘটনার পর চরশিবায় পোস্টার ছিড়ে ফেলে তারা। আগেই থেকেই ক্ষোভ ছিলো তাদের এবং আজকে গণঅধিকারের সভায় লোকজন যাওয়ার কারণে মারধর করে।
যুব অধিকারের ৯ নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক সোহেল খলিফা বলেন, দু'পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হলে বিএনপির লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে হামলা করে। আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করি এসময় উভয়ের মধ্যে মারামারিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
নুরুল হক নুরের ভাই ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব অধিকার পরিষদের সহ সভাপতি আমিনুল ইসলাম নুর বলেন, আমি এলাকায় ছিলাম না। তবে বিষয়টি হলো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চর কপালবেড়ায় ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে গণঅধিকারের একটি সভা ছিলো। অন্যদিকে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে বিএনপির লোকজন মিছিল করে। মিছিল শেষে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর তারা হামলা করেছে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হাসান মামুন নমিনেশন না পাওয়ার কারণে বিএনপির লোকজন উশৃংখলতা শুরু করছে। এলাকায় একটা ভয়ভীতি ও ত্রাসের রাজনীতি করতে চায় যাতে গণঅধিকারে কেউ যোগ না দেয়।
ঘটনার পর রাত ১২ টার দিকে আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন। এসময় উভয় দলের আহতদের তিনি চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। তিনি সকলকে ধৈর্য ও শান্তি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানান।
দলীয় সূত্র জানায়, শুক্রবারে বিএনপির প্রোগ্রামে অংশ নিতে হাসান মামুন ঢাকা থেকে রাতে গলাচিপা আসেন। মারামারির খবর পেয়ে তিনি আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে হাসপাতালে ছুটে যান।
এ বিষয়ে হাসান মামুন বলেন, আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে শুনেছি, তবে এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এখানে রয়েছেন। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। আমরাও প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি। এসময় তিনি আরও বলেন, শুক্রবার (৭ নভেম্বর) আমাদের দলের একটি র্যালি রয়েছে, সে কারণেই নেতাকর্মীরা সংগঠিত হচ্ছিলেন। সেই প্রোগ্রাম ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে হয়তো এ ধরনের তৎপরতা চালাতে পারে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করবো, সঠিকভাবে তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করুন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশাদুর রহমান জানান, দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুই পরিবারের সদস্যরা দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থক। তাদের পূর্বে প্রভাব বিস্তার নিয়ে পারিবারিক বিরোধ আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় এ নিয়ে সংঘর্ষ হতে পারে।