যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার সরবরাহ, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ও চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (সজেকা) তিন সদস্যের একটি দল ছদ্মবেশে এই অভিযান পরিচালনা করে এবং অভিযানের সময় বিভিন্ন অনিয়ম সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে।
অভিযান দলের সদস্যরা রোগী সেজে খুলনা যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে চাইলে চালক এখলাস সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন। সরকারি নিয়মের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি সরাসরি জানান, ওসব সরকারি নিয়ম এখানে চলে না, যা ভাড়া বলেছি তাই দিতে হবে।
অভিযানে আরও দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবার সরবরাহেও ব্যাপক অনিয়ম চলছে। বরাদ্দ অনুযায়ী রোগীর জন্য যে পরিমাণ মাছ, পাউরুটি ও ডাল সরবরাহ করার কথা, বাস্তবে তার প্রায় অর্ধেক দেওয়া হচ্ছে। ভালো মানের ডালের বদলে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের ডাল, আর চাল-লবণের মানও নিম্নমানের পাওয়া গেছে। রোগীদের জন্য রাখা ওয়াশরুমগুলোর অবস্থা ছিল অত্যন্ত নোংরা এবং ব্যবহারের অনুপযোগী।
পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুদ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নিশ্চিত হয়। এছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের ইচ্ছাকৃতভাবে স্থানীয় একটি বেসরকারি ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। এই কাজে সহায়তা করার সময় নয়ন হোসেন নামের এক দালালকে হাতেনাতে আটক করা হয়। তিনি নিজেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার বলে পরিচয় দেন।
চিকিৎসা সেবায়ও অনিয়মের চিত্র সামনে আসে। জরুরি বিভাগে কোনো ডিগ্রিধারী চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন স্যাকমো (উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) মাসুদুর রহমান, এবং আউটসোর্সিং কর্মী দিয়ে রোগীর কাটা-সেলাইয়ের কাজ করানোর অভিযোগও উঠে আসে।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক চিরঞ্জীব নিয়োগী বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এই অভিযান চালানো হয় এবং অনিয়মগুলো সরাসরি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। অভিযানে ডিএডি তৌহিদুল ইসলাম এবং এএসআই রমেচা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার ইসমাইল হোসেন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ১২ বছর আগের মূল্য তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে হয়, এজন্য মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। মামলার ভয়ে চুক্তি ছাড়তে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফয়েজ আহমদ ফয়সল বলেন, দুদকের অভিযানে পাওয়া অনিয়মগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাসুদ রানা জানান, তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।