চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত। এ বিষয়ে তদন্ত করতে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
কমিটি গঠনের বিষয়টি সামনে এসেছে সোমবার। এর আগে রোববার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. ফিরোজ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সুরাইয়া আখতার জাহান এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মো. ফিরোজ মাহমুদকে।
আদেশে বলা হয়, “চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র কর্তৃক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলির পত্র এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যোগদান পত্রসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্তপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করা হল।”
এর আগে গত ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে বদলি করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। তার আগে ৩০ অক্টোবর অন্য এক চিঠিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম তাকে প্রশিক্ষণ শেষে চসিকে যোগদান করতে না দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানান।
এদিকে গত শনিবার সকালে লন্ডন সফরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়েছেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। পরদিন রোববার চসিক থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের লন্ডন সফরকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কার্যক্রমের তদারকি করবেন সচিব ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আমিন।
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি যোগদান পত্র দেওয়ার পরও তা গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন থেকে উনারা মন্ত্রণালয়কে জানাননি। সেটা আমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত করে উনারা প্রতিবেদন দেবেন।”
তাকে মেয়রের দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনো জবাব দিইনি।”
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিলেন মেয়র। কর নির্ধারণে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে ‘দায়িত্বে অবহলোর’ অভিযোগে ওই নোটিস দেয়া হয়।
ওই নোটিসে বলা হয়, “কর নির্ধারণে এই অনিয়ম কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করা হয় ২০২৩ সালের ২৮ মে। আপনি ওই সময় থেকে চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সময় এই অভিযোগের বিষয়ে দ্রুততার সাথে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ব্যবস্থা করাসহ দোষীদের সনাক্তকরণ এবং ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের গৃহকর বাতিল করে পুনঃনির্ধারণে কোনো পদক্ষেপ নেননি।”
এ কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং দোষী ব্যক্তিদের যথাসময়ে কোন শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, “এতে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ এর ৬২ (২) ধারা অনুসারে আপনার দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।”
গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রশিক্ষণের জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করলে যথাযথ তদারকির মাধ্যমে দ্রুত প্রতিবেদন জমা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও নোটিশে বলা হয়।
নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ‘দায়িত্ব অবহেলার’ বিষয়ে কারণ দর্শাতে প্রধান নির্বাহী কর্মমর্তাকে নির্দেশনা দেন মেয়র।
এ বিষয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেছিলেন, “যখন এ বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হয় তখন থেকে তিনি দায়িত্বে ছিলেন। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বিষয়টি তিনি আমাকে অবহিত করেননি।
“জানুয়ারি মাসে আমি জানতে পেরে পুনরায় এই বিষয়ে তদন্ত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করি। কিন্তু গত ৮-৯ মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এর দায় দায়িত্ব উনারই।”
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেছিলেন, “তিনি ট্রেনিংয়ে যাওয়ার পর সচিব যখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেলেন তারপরই তদন্ত প্রতিবেদন পেলাম। এরপর আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।”