আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী বা স্টেট ডিফেন্স হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম খান পান্না (জেড আই পান্না) নিয়োগ পেয়েছেন।
রোববার (২৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ দেন।
এর ফলে এখন থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে লড়বেন। এই নিয়োগটি এমন এক সময়ে এল যখন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের দুটি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেছে।
জেড আই খান পান্না সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন। তিনি এর আগেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, যদিও সেই সময় ট্রাইব্যুনাল-১ তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল।
এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে গুম ও নির্যাতনের দুটি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৩ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করে। এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য পলাতকদের পক্ষে জেড আই খান পান্নাকে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে এই দুই মামলায় সেনাবাহিনীর ১৩ জন কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন সহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরকরণের কারণে সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়। ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘিরে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করেন। দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, তারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন।
গত ২০ নভেম্বর এই দুই মামলার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও, প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববারের দিন ধার্য করা হয়। এর আগে ২৬ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের প্যানেল আদেশ দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে ১০ জন সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার রয়েছেন। জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল বা আয়নাঘরে গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও এক মামলায় শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকীসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় তিনজন কারাগারে থাকলেও বাকিরা পলাতক রয়েছেন।