বৃহস্পতিবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শ্যামনগরে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার হ্রাসের দাবিতে মানববন্ধন
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫:৩৯ PM

কৃষিজমিতে অতিমাত্রায় ব্যবহৃত ক্ষতিকর ও রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসের দাবিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় গ্রীন কোয়ালিশন, শ্যামনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী এসোসিয়েশন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজের যৌথ আয়োজনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে কৃষক, শিক্ষার্থী, নারী সংগঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্রীন কোয়ালিশন শ্যামনগর পৌরসভার উপদেষ্টা ও শ্যামনগর প্রেসক্লাবের সিনিয়র সাংবাদিক ইঞ্জিনিয়ার শেখ আফজালুর রহমান। তিনি বলেন, “শ্যামনগরে কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার শুধু কৃষিকে নয়, মানুষের জীবনকেও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বিষের সহজলভ্যতা বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।”

বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিলনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস. এম. মোস্তফা কামাল, রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন আরাফাত, বারসিকের সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, গ্রীন কোয়ালিশনের সাধারণ সম্পাদক কিরণ শংকর চ্যাটার্জী, ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের সভাপতি জিল্লুর রহমান, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সভাপতি ডা. যোগেশ মণ্ডল, শ্যামনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী এসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুদ্দিন সিদ্দিক, সহ-সভাপতি মোমিনুর রহমান, শরুব ইয়ুথ টিমের স্বেচ্ছাসেবক জেবা তাসনিয়া এবং কৃষক দেবীরঞ্জন মণ্ডল প্রমুখ।

শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস. এম. মোস্তফা কামাল বলেন, “ইতিপূর্বে বহু কৃষক কীটনাশক ছিটাতে গিয়ে অসুস্থ হয়েছেন। পুকুরের মাছ নষ্ট হয়েছে, গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে এসবই আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা। কৃষকের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে হলে কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।”

গ্রীন কোয়ালিশনের সাধারণ সম্পাদক কিরণ শংকর চ্যাটার্জী বলেন, “শ্যামনগরে কীটনাশক এতটাই সহজলভ্য যে অনেক ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীরা পারিবারিক বা আত্মকলহের জেরে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। এটি এখন কেবল কৃষি নয়, একটি বড় সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে।”

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মোমিনুর রহমান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের চাপে কৃষি ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর কীটনাশকের ক্ষতি যুক্ত হয়ে পুরো কৃষি ব্যবস্থাই হুমকির মুখে পড়ছে। পরিবেশবান্ধব বিকল্প কৃষি পদ্ধতির প্রসার এখন সময়ের দাবি।”

বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার বলেন, “উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানি ইতোমধ্যে লবণাক্ততা ও দূষণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অতিরিক্ত বিষ ব্যবহার এই সংকট আরও গভীর করছে। তাই সমন্বিত পেস্ট ম্যানেজমেন্ট, জৈব কৃষি ও কৃষক প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।”

মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সভাপতি ডা. যোগেশ মণ্ডল বলেন, “বিষক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। কৃষক, যুব সমাজ ও পরিবার সবার সুরক্ষার জন্য এখনই কার্যকর সচেতনতা প্রয়োজন।”

কৃষক দেবীরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “ক্ষতিকর কীটনাশকের কারণে মাঠে কাজ করতেই ভয় লাগে। জৈব কৃষি চালু হলে ঝুঁকি কমবে, খরচও কম হবে।”

মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষতিকর কীটনাশকের বিক্রি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, নিম্নমানের বিষের বাজারজাত বন্ধ, কৃষকদের জন্য সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম নিশ্চিতকরণ, জৈব কৃষি প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি এবং বিষমুক্ত খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ জোরদারের দাবি জানান।







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৮৪১০১১৯৪৭, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত