রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫ ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
হবিগঞ্জের বাহুবলে পুকুরে গিলে খাচ্ছে প্রিয়জনদের কবর
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২, ৬:০৪ PM আপডেট: ২৯.০৭.২০২২ ৮:৩০ PM
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পূর্বজয়পুর গ্রামে অবৈধ পুকুরের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ৬৬ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কবরস্থান। পুকুরের ভাঙ্গনে গত একযুগে অর্ধশতাধিক কবর বিলীন হয়ে গেছে।

পুকুর আছে, পাড় নাই। কিছুদিন না যেতেই রাস্তা ধ্বসে পড়ে পুকুরে। বর্তমানে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে গড়ে উঠা পুকুরের কারণে কবরস্থান এরকম ভেঙ্গে পড়ার চিত্র চোখে পড়ে। ঠিক তেমনটিই ভাদেশ্বর ইউনিয়নের পূর্বজয়পুর গ্রাামের পশ্চিম পাড়ার একমাত্র কবরস্থান ভেঙ্গে যাওয়ায় চরম জনদুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন দায়ী করেছেন পুকুরের মালিক ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষার বৃষ্টি ও পুকুরের পানির স্রোতের ভাঙনে প্রিয়জনদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন কবর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাঙন রোধে পুকুরের মালিকদের  একাধিকবার জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

এই কবরস্থানের পাশে মাছ চাষের জন্য পুকুরটি ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘ দিন ধরে পুকুর মালিক এই পুকুরে মাছ চাষের ব্যবসা করে আসছেন একই এলাকার মৃত জাফর আলী ওরফে পাগলা মিয়ার ছেলে আলকাছ, রাসেল মিয়া ও ফারুক মিয়া। মাছ চাষে তাদের পরিবার লাভবান হলেও ক্ষতি হচ্ছে এই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার  মানুষের একমাত্র কবরস্থান । পুকুরটি যেন কাল হয়ে দাড়িয়েছে জনগুরুতপূর্ণ এই কবরস্থান।

স্থানীয়রা বলছেন, পুকুরের মালিক নিজেদের স্বার্থে মাছ চাষের জন্য পুকুরটি খনন করে। কিছুদিন না যেতেই কবরস্থান গিলে ফেলে পুকুরে। অল্প অল্প করে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে  বর্তমানে পুরো কবরস্থান যেন পুকুরে বিলীন হতে চলেছে। এতে স্থানীয়দের  চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বছরের পর বছর এসব ভাঙ্গা আর মেরামত হয় না। পুকুরধারে কবরস্থান ভাঙনের জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার  কোন কার্যকর পদক্ষেপও নেয় না। যার ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ  এই কবরস্থান ভেঙ্গে গিয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। অনতিবিলম্বে পুকুরের পাশে গাইড ওয়াল দিয়ে কবরস্থানটি দ্রুত সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, ১৯৫৬ সালে পূর্বজয়পুর গ্রামের শেখ মৃত আয়াত উল্লাহ বাড়ির পূর্ব দিকের দক্ষিণ পাশে প্রায় ৩৮ শতাংশ জমি নিয়ে কবরস্থান নির্ধারণ করা হয়। স্থানীয় কারো মৃত্যু হলে ওই কবরস্থানে তাদের সমাহিত করা হয়। পাশাপাশি বেওয়ারিশ লাশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদেরও এখানে সমাহিত করা হয়।

কিন্তু সীমানা প্রাচীর না থাকা ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুকুর তৈরি হওয়ার পর থেকেই পুকুরের পানিতে এর জমি বিলীন হচ্ছে। ইতোমধ্যে কবরস্থানের প্রায় ২০ শতক জমি পুকুরে বিলীন হয়ে গেছে। কবরস্থানের জমি ভরাট কিংবা সীমনা প্রাচীর নির্মাণে পুকুরের মালিক কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে কবরস্থানের প্রায় পঞ্চাশটির অধিক কবর পুকুরে বিলীন হওয়ার হুমকিতে আছে।

শুক্রবার (২৯ জুলাই) সকালে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিশাল পুকুরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত কবরস্থানের মাটি ভেঙে ভেঙে পুকুরে পড়ছে। কবরস্থানের অনেক গাছ পুকুরে বিলীন হয়ে গেছে। আগাছা-পরগাছা জন্মে কবরস্থানে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। খসে পড়ছে কবরের মাটি। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে কোণে একটি  গাছের শিকড়  একটি কবরের নিচে ঢুকে মাটি সরিয়ে ফেলেছে। ওই গাছটি যেকোনো সময় কবরটি নিয়ে পুকুরে বিলীন হতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর ও শফিক মিয়া বলেন, ‘আমার দাদা, চাচা ও মা বাবাকে এই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু পুকুর তাদের কবর গিলে খেয়েছে। এখন অন্যান্য প্রিয়জনদের কবর গিলে খাওয়ার অপেক্ষায় আছে পুকুরটি। কিন্তু পুকুরের মালিক কর্তৃপক্ষ কবরস্থান সংস্কার কিংবা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

অপর বাসিন্দা এডভোকেট মিজান মিয়া বলেন, বাবার মৃত্যুর পর তাকে এখানে দাফন করা হয়। এখনো আমার পরিবারের সদস্যরা বাবার কবরটা জিয়ারত করতে পারে। কিন্তু পুকুর যেভাবে ভাঙছে তাতে মনে হয় আসছে বর্ষায় আমার বাবার কবরটিও বিলীন হয়ে যেতে পারে। তখন আর এখানে এসে বাবার কবরটা জিয়ারত করতে পারব না।

এ বিষয়ে পুকুরের মালিক কর্তৃপক্ষ কাছে মোবাইল ফোনে  জানতে চাইলে মুঠো  ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

-বাবু/ফাতেমা

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত