কক্সবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনেই ময়লার ভাগাড়। ছবি : বাংলাদেশ বুলেটিন
গাড়ি থেকে নামার আগেই নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া শাহাব উদ্দীন। দ্রুত হেঁটে রাস্তাটুকু পার হলেই স্বস্তি। ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে বমি আসার জোগাড় হয় তার। শুধু শাহাব উদ্দীন নয়, তার মতো কক্সবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঠিক সামনেই রয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা আশপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা ময়লা সারা দিন এখানেই ফেলে ময়লা স্তুপ করে রাখে। আবার পরিছন্নকর্মীরা সময়-সুযোগ না মেনে সব সময় ময়লা নাড়াচাড়া করেছে। সেই নাড়াছাড়া করা ময়লা আবর্জনা খেয়ে বেড়াচ্ছে গরু৷ ফলে এ ময়লার স্তূপটি এখন শত শত শিক্ষার্থীর কাছে মহাভোগান্তির নাম।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক রুমালিয়ারছড়া এলাকায় অবস্থিত কক্সবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, পাশে রুমালিয়ারছড়া জামে মসজিদ, রুমালিয়াছড়া বৃহৎ বাজার, সাথে প্রধান সড়ক দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার পথচারীদের যাতায়ত৷ শহরের প্রধান সড়ক আর কলেজের সামনের ময়লা আবর্জনা খেয়ে বেড়াচ্ছে গরু৷
বিশেষ করে দেখা যায়, প্রতিদিনই হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছে। ছুটির পর আবার তারা ফিরে যাচ্ছে। স্কুল এন্ড কলেজের সামনেই এবং প্রধান সড়কে ময়লায় ভাগাড়। দুর্গন্ধ তো আছেই, সেই সঙ্গে ময়লা পরিবহনের ভ্যান আর তাদের ময়লার ডাম্পার গাড়ির কারণে সেখান দিয়ে যান চলাচলও প্রায় অসম্ভব। এমনকি ফুটপাতেও ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আর এসব কারণে সড়কে চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। নাকে হাত না দিয়ে এ এলাকা দিয়ে যাতায়াত এক রকম অসম্ভব।
কক্সবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক হাবিবুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পৌরসভা শহরের মানুষের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করে। বিনিময়ে নাগরিকদের একটু সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লার স্তুপ রাখা হয়েছে। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ হাজার হাজার মানুষের যাতায়তের প্রধান সড়কের সামনে ময়লা ভাগাড়। দুর্গন্ধে হাঁটাচলা তো বটেই স্কুলেও টেকা দায়। এগুলো যেন দেখার কেউ নেই।’
নুরুল হুদা নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, আগে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এখানে থেকে ময়লা নিয়ে গেলেও এখন না নেওয়ার এটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দিন দিন বিদ্যালয়ের পাশে ময়লা আবর্জনার স্তূপটি আরও বড় আকার ধারণ করছে। এতে করে আমাদের এলাকার পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার ময়লা আবর্জনা গুলি এনে এইখানে ফেলে যায়৷ এ সমস্যার কথাটি পৌরসভাকে কয়েকবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তারা৷
কক্সবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী তফন কুমার ঘোষ বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, আমার কলেজে প্রায় ৫ হাজার মত শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশে ময়লার ভাগাড়টি থাকায় শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, পৌরসভাকে আমরা শতবার বলার পরেও কলেজের সামনেই এবং প্রধান সড়কে ময়লা-আবর্জনা এখানে ফেলে যায়। আমরা বারবার মানা করলেও তারা কথা শুনছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে ময়লার স্তূপটি সরিয়ে না নিলে আমরা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাস্তায় নামব৷
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকি জামশেদ বর্জ্য অপব্যবস্থাপনার বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, পৌরসভায় যারা এ কাজের স্টাফরা রয়েছে তারা এখন সিন্ডিকেটে পরিণত৷ তাদের আমরা কাউন্সিলররা পর্যন্ত পরিস্কারের বিষয়ে বললে নানান অযুহাত দেখায়৷
তিনি আরো বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে জনস্বার্থে এবং শিক্ষার্থীদের বিষয় চিন্তা করে আমার পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি৷
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একে এম তারিকুল ইসলাম বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন,
আপনার থেকে বিষয়টা মাত্রে শুনেছি৷ একটি কলেজের সামনে এবং প্রধান সড়কে এইভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা খুবই দুঃখজনক বিষয়৷
আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি৷
-বাবু/ফাতেমা