সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫ ৩০ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
নেত্রকোনায় সার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা কৃষক, সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপের আশা
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২:৩৯ PM
নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলায় প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা থেকে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে সার ডিলারদের বিরুদ্ধে। সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সার। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ জেলার স্থানীয় কৃষকরা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে জেলার সকল খুচরা সার ব্যবসায়ীরা।

গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরিয়া সারে কেজিপ্রতি ৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এরপর বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষিতে ব্যবহৃত অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সকল কৃষক। 

জেলার বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, মদন, আটপাড়া, কেন্দুয়া, পূর্বধলা, দুর্গাপুর,ও কলমাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ১১০০ টাকার ইউরিয়া সার বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ থেকে ১৩৫০ টাকায়, ৮০০ টাকার ডিএপি সারের বস্তা ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়। অন্যদিকে ১১০০ টাকার টিএসপি সার বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় এবং ৭৫০ টাকার এমওপি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা বস্তা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি বস্তা সার কেনার সময় কৃষককে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে এখন পর্যন্ত জেলার কোনো কৃষক সার সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানান অনেক কৃষক। এমনকি চলতি আমন মৌসুমে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে তাদের। সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদনে বাড়তি তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ পড়বে। প্রতিবিঘা জমিতে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে ফসল উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য না পেলে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়তে হবে। জানা গেছে, এতে জেলার সার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের শক্ত হাত রয়েছে।

সরকারি সারের ডিলারদের দেখভাল করে জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দেখভাল না করায় বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণেই ফসল উৎপাদনের অত্যাবশ্যকীয় তিন জাতের সার পেতে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে প্রায় দেড়গুণ টাকা। নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি মূল্যে সার বিক্রি করছে জেলা ও উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি দোকানে লাল কাপড়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশ দেওয়া থাকলেও কোথায়ও কোথাও তা মানা হচ্ছে না। বারহাট্টা উপজেলার এক খুচরা সার ব্যবসায়ী জানান, বিসিআইসির ডিলাররাই খুচরা মূল্যে আমাদের কাছে সার বিক্রি করেন। ডিলাররা আমাদের কোনো রসিদও দেন না। সে ক্ষেত্রে আমরা কী করে সরকারি মূল্য তালিকা অনুযায়ী সার বিক্রি করব আপনারাই বলেন।

এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে সার ডিলার বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’কৃষি এ দেশের জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের অন্যতম উৎস। আজ দেশে খাদ্য ঘাটতি নেই। কৃষি ক্ষেত্রে নানা ভর্তুকিসহ উচ্চ ফলনশীল বীজ সরবরাহ করছে সরকার। কৃষিঋণ সময়মতো কৃষকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। এভাবে পৌঁছানোর ফলে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বেড়েছে। আর তাই বেড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। 

দেশে কৃষিপণ্যের উৎপাদনে কৃষককে সহায়তায় সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। অভিযোগ উঠেছে, নেত্রকোনা জেলার সকল উপজেলায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সার। সংশ্লিষ্টরা সব ধরনের সারের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও সিন্ডিকেট, মজুদদারদের অতিমুনাফার লোভের কারণে নির্ধারিত মূল্যে সার পাচ্ছে না কৃষক। সার নিয়ে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। সার সঙ্কটে কৃষক যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সচেতন ও সচেষ্ট থাকতে হবে। কোনো অজুহাত দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সার নিয়ে কোনো কারসাজি করতে না পারে সে জন্য কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের উচিত নেত্রকোনা জেলা শহর সহ জেলার সকল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সার ডিলারদের প্রতি নজরদারি বাড়ানো। প্রয়োজনে দোষীদের জরিমানাসহ অন্য শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সময়মতো সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার কৃষকের কাছে পৌঁছানো জরুরি, যাতে কৃষিপণ্যে উৎপাদনে ব্যাঘাত না ঘটে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এবিষয়ে জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূরুজ্জামান বলেন, আমরা প্রতিদিনেই জেলার বিভিন্ন বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি, এবং যারা অতিরিক্ত দামের সার বিক্রি করছেন তাদেরকে জরিমানা করছি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে, এবং আমাদের নজরদারি অব্যাহত থাকবে জেলার প্রতিটি ছোট বড় বাজারে, আমাদের প্রতিটি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিদিনেই বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করছেন এবং কোথাও অনিয়মের কোন খবর পেলে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন, যাতে কৃষকদের কোন ভোগান্তিতে না পড়তে হয়, কারণ কৃষকরা এদেশের সম্পদ কারণ তাদের হাতে এ দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের দাড়িপাল্লা।

-বাবু/এসআর
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত