শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫ ৬ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫
মানবেতর জীবনযাপন করছে মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন রংদীর পরিবার
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোণা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ৪:২৩ PM
নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ী কালাপানির বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আদিবাসী নৃপেন রংদীর পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পশ্চিম পাকিস্তান যখন পূর্ব পাকিস্তানে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল, তখন নবম শ্রেণির ছাত্র আদিবাসী নৃপেন রংদী নিজেকে ঘরবন্দী না করে ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে৷

তুরা রংনাবাদ থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শেষে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, নেত্রকোণা নিয়ে গঠিত ১১নং সেক্টরে অধিনায়ক কর্নেল আবু তাহেরের অধীনে যুদ্ধ করেন মুক্তিযুদ্ধা নৃপেন রংদী৷ আজ যখন দেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পার করে, তখনো বীর মুক্তিযোদ্ধার নৃপেন রংদীর পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷

বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন রংদী নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের কালাপানির বাসিন্দা৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ এলাকায় কর্মজীবন শুরু করেন তিনি৷ একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প হয়তো এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু এই বীরের স্ত্রী শুরু করেন জীবন নামক যুদ্ধের আরও একটি গল্প৷ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী প্রতিরোধ যোদ্ধা জরিনা রিছিল শুরু করে নতুন করে বাঁচার জন্য জীবন যুদ্ধ।

যেখানে একাই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। আর নিকট আত্মীয় ও সমাজ যেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী৷ বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন রংদীর স্ত্রীসহ দুই মেয়ে তন্দ্রা রিছিল, চিত্রা রিছিল, ও তিন ছেলে রতন রিছিল, ভীরু রিছিল, মানিক রিছিল৷ যদিও বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন রংদীর স্ত্রী বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করছেন না বলে জানান গণমাধ্যমকে৷ তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধা হয়ে ও কেন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবো, আমরা উপজাতি বলে।

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জরিনা রিছিল জানান, তার স্বামীর শেষ স্মৃতিটুকু পর্যন্ত দেখতে পারেননি তিনি, তিনি বলেন সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি করে দিচ্ছেন এজন্য আমরা ও আবেদন করেছি, কিন্তু আমাদের আবেদন মঞ্জুর হয়নি, কিন্তু কেন এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাই, তাহলে আমরা উপজাতি বলে বঞ্চিত৷ তার স্বামীর বন্ধু পরিচয়ে কে বা কারা তার ব্যবহার করা আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যায় বলে জানান এই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী৷ এভাবেই অভাব অনটনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জরিনা রিছিল।

একটি জরাজীর্ণ ঘরে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের কালাপানির বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন রংদীর পরিবার। বর্তমানে বয়সের চাপে ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে সংসার চালিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন রংদীর স্ত্রী জরিনা রিছিলের৷ তার ওপরে স্বামীর ভাই-বোনদের প্রতিহিংসার আগুনে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মুক্তিযুদ্ধা নৃপেন রংদীর স্ত্রী৷ এমতাবস্থায় বঙ্গকন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার একান্ত দৃষ্টি আকর্ষণ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন এই অসহায় পরিবারটি৷ 

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসেম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন রংদীর বিষয়টি আমি সরেজমিনে দেখে আবাসনের ব্যবস্থা করবো। এই বিষয়ে জানতে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এই প্রতিনিধিকে জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা সরকারের সুযোগ সুবিধা থেকে কখনো বঞ্চিত হতে পারে না। আমি কলমাকান্দা উপজেলার ইউএনও কে বলে দিচ্ছি বিষয়টি সরেজমিনে দেখে ব্যবস্হা নেওয়ার জন্য।

বাবু/জেএম

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত