হাওর বাউরের জেলায় নেত্রকোনায় আমন ক্ষেতে সবুজের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় কৃষকদের মনে বিরাজ করছে হাসি-খুশি ভাব। বুক ভরা আশা করছেন এবার বুঝি লাভবান হবেন। তিন দফা বন্যার পরও কোন জমি পতিত পড়ে নেই। এমনকি চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল পর্যন্ত ভরপুর আমন ধানের মাঠ। গত মৌসুমে আমন ধানের ভাল দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ফের আমনেই স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। ধান ক্ষেতের পরিচর্যা শেষে এখন রোগ-বালাই দমনের কাজে ব্যস্ত কৃষক। চারিদিকে যেন শ্যামল সবুজের সমারোহ ঘটেছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের চলিত আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ১৪ হেক্টর। সেখানে অর্জিত হয়েছে ২৯ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হয়েছে ৫৮৫ হেক্টর। এবছর কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এক হাজার ২৫০ জন কৃষককে। এদের প্রত্যেককে এক বিঘা করে আবাদের জন্য ৫ কেজি উফসী ধানের বীজ, ড্যাপ সার ১০ কেজি ও এমওপি সার ১০ কেজি দেয়া হয়েছে। ধানের জাত সমূহ হচ্ছে ব্রিধান-৭৫, ৮০, ৮৭, ৫১, ৫২, ৫৬, ৭১, ৯০, ৯৩, ৯৪, ৯৫ প্রভৃতি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এ মুহূর্তে ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। যারা বর্ষার শুরু থেকে আমন ধানের চারা রোপন করেছেন, তাদের জমির ধান গাছ অনেকটা বড় হয়ে গেছে। এখন শেষ মহুর্তে ধানের জমিতে ভালো ফলনের জন্য অনেক কৃষক ইউরিয়া সার ছিটাচ্ছেন। সারের কোন সংকট না থাকায় মনের সুখে আবাদে আত্ন নিয়োগ করেছেন তারা। আবার অনেকে ধানের পোকামাকড় প্রতিরোধ করতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। আর সেই সাথে দুলছে আমন চাষিদের স্বপ্ন।
বারহাট্টা উপজেলার সাহতা গ্রামের কৃষক জামিউল ইসলাম সাগর বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছেন। শেষ মহুর্তে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অধিক ধান উৎপাদন হবে বলে আশা তার। একই এলাকার কৃষক ডেন্ডু মিয়া বলেন, তিনি চরের নিম্নাঞ্চলে দেড় একর জমিতে ধানের চাষ করেছেন। জমিতে সার এবং ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। অধিক ধান উৎপাদনের প্রত্যাশা করেন তিনিও। বিভিন্ন চর ও নিম্নাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বরাবরের তুলনায় এবার আবাদ মোটামুটি ভালই হয়েছে।
পূর্বধলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা যাতে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করে সে জন্য প্রনোদনা প্রদান করা হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতিতে একজন চাষি চাষাবাদ করলে তার আশেপাশে যে সকল কৃষক রয়েছে তারা তা দেখে উৎসাহিত হবে। এতে আমনের ফলন আরো বেশি হবে। তিনি আরো বলেন, সঠিক পরার্মশ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে ধানের ফলন ভালো হয়। তাই মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি সহ উপজেলার সকল উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বৃন্দ। ধানের ফলন বেশি হওয়ার জন্য কৃষকদের সঠিক সময়ে বীজ বপন, সঠিক নিয়মে মানসম্মত ধানের চারা রোপন, নিয়ম অনুযায়ী সার ব্যবহার ও সঠিক পরিচর্যার পরামর্শ প্রদান করা হয়। এছাড়া পোকা দমনে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমনের জন্য পরামর্শ প্রদান করি। যাতে কৃষকের চাষাবাদ খরচ কম পড়ে এবং পরিবেশের ক্ষতি না হয়।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সিত্রাং ঘুর্ণিঝড়ে কয়েক হেক্টর জমির আমন ক্ষেতের মাঝে মাঝে নুয়ে পড়েছে। তবে ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন নেই। তাছাড়া আমনের পরিস্থিতি খুবই ভালো। হেক্টর প্রতি ৪ মে.টন থেকে ৪.৩ মে.টন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হবে বলে আশা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নূরুজ্জামান বলেন, বরাবরের তুলনায় এবার জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমরা আমাদের লক্ষমাত্রার চেয়েও বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারবো। শুধু আমনেই নয় আমাদের বোরো ফসলের টার্গেট প্রতি বছরের তুলনায় অনেক বেশি হবে।
-বাবু/এ.এস