উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডার খ্যাত উত্তরের জেলা বগুড়া। এখানকার চাষিরা সারা বছরই নানা জাতের বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে থাকেন। সবেমাত্র শীতের আগমনী বার্তা। পুরো শীত মৌসুমের পূর্বেই সবজি চাষীরা বাজারে আনছেন শীতের আগাম জাতের বিভিন্ন রকম সবজি। বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন অনেকে। কম খরচে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।
আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে এসব সবজি। বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে নানা ফসল। এখানকার উৎপাদিত ফসল রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরের বাজারে বিক্রি হয়ে এখন রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বগুড়া জেলায় ২৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে সারাবছর কৃষকরা নানা ধরনের ফসল ফলান। জেলার প্রধান ফসল ধান, মরিচ, আলু, সরিষা, কলা, পাট, আখসহ বিভিন্ন শাক-সবজি। এছাড়া মৌসুমের আগেই জেলার বিভিন্ন মাঠে সারি সারি শিম গাছ, শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, মুলা, করলা, পটল, পালং ও লাল শাকসহ নানা রকমের শীতকালীন সবজির চারা।
এসব শীতকালীন সবজি ইতোমধ্যে বাজারে তোলা শুরু হয়েছে। আগাম বাজারে উঠায় সবজির দামও ভালো পাচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। বগুড়ার উৎপাদিত আলু দেশ ছাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ হাজার মেট্রিক টন বিষমুক্ত আলু নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, দুবাইসহ ৮টি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বগুড়ার সবচেয়ে বড় কাচা সবজির বাজার মহাস্থান। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের পাইকারগণ এ হাটে এসে সবজি কিনে নিজ শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে থাকেন। জেলার যুমনা নদীর অববাহিকা উপজেলা ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা বালু মাটিযুক্ত জমিতে উৎপাদিত কাচা মরিচ দেশজুড়ে নাম কুড়িয়েছে। এখানকার লাল মরিচের ঝাল বেশি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে দেশে মসলা বাজারজাতকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠান বগুড়া থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যায়। জেলার উত্তরের শিবগঞ্জ ,সোনাতলা, ও গাবতলী উপজেলায় অন্যান্য কৃষি ফসলের পাশাপাশি কলা ও আখ চাষাবাদ করে থাকেন এখানকার কৃষকরা।
বগুড়া সদর উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছর দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের ফুল কপি চাষ করেছেন। আগাম জাতের এ সবজি বাজারে বিক্রি করে ভাল দাম পেয়েছেন তিনি। একই ভাবে দক্ষিণ ভাগ গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল হোসেন জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে মূলা ও শিম লাগিয়েছেন। শীতের শুরুতে এসব সবজি বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছেন। এতে তিনিসহ এলাকার প্রায় সকল চাষীরা খুবই খুশি।
মহাস্থান হাটে আসা চাষী আব্দুর রহমান জানান, উৎপাদন ভালো হয়েছে , চাহিদাও ভালো এবং বাজারে দামও পাচ্ছি। ফুলকপি প্রতি মণ ২২০০ টাকা, করলা ১৪০০, মুলা প্রতি মন ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, জেলায় ২৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে সারাবছর এখানকার কৃষকরা নানা ফসল চাষাবাদ করে থাকে। চলতি বছর বগুড়ায় আগাম জাতের শীতকালিন সবজি চাষ হয়েছে ২ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। যা থেকে আগাম শীতকালীন প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে। আগাম শীতকালীন সবজির চাষ আরো বাড়বে। গত বছর ৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ করেছিলেন চাষিরা। তা থেকে গত বছর প্রায় ৫৪ হাজার মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়। বগুড়ায় চাষকৃত সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলো বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সরকার শফি উদ্দীন আহমদ জানান, বগুড়ার একটি কৃষি সমদ্ধৃ জেলা। এখানকার মাটি বেশ উর্বর এবং কৃষকরা খুব পরিশ্রমী। তারা সারাবছর নিবিড় ফসল উৎপাদনে নিয়োজিত রাখে। বগুড়ায় উৎপাদিত ফসলের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মধ্যে ধান, সবজি, মরিচ, আলু এবং ইদানিং অনেক ফলের বাগান হচ্ছে। বগুড়ার ফসল বিশেষ করে আমন, বোরো ধান উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ উৎপাদন হয় যা প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। চরাঞ্চলের অনেক ভালো মান সম্মত মরিচ চাষাবাদ হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি। আলু বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বগুড়া জেলায়। এখানকার আলু বর্তমানে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
বাবু/জেএম