বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
কক্সবাজারে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান আছে, মামলা নেই
রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ AM আপডেট: ১০.১১.২০২২ ১২:১৪ AM

পরিবেশসংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা, প্রয়োগের ব্যর্থতার সুযোগে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পাহাড়কাটা, বনধ্বংস ও অবৈধভাবে নদী থেকে বালি উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও হয় না মামলা।


অভিযোগ উঠেছে, পরিবেশ ধ্বংসকারীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে মামলা বাণিজ্যে নেমেছেন অসাধু কর্মকর্তারা। সম্প্রতি পাহাড় কাটার একটি এনফোর্সমেন্ট মামলা থেকে তিনজনের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনায় বিষয়টি সামনে চলে আসে। যদিও অনৈতিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।


পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২ সালের শুরু থেকে অক্টোবরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত পাহাড় কাটার অভিযোগে ৪০টি অভিযানে এনফোর্সমেন্ট হয়েছে ২৫টি। অথচ নিয়মিত মামলা হয়েছে শুধু ছয়টি। বাকি ১৫ অভিযানের কোনো তথ্য দিতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর। অভিযোগ উঠেছে, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে কাগজে-কলমে ৪০টি অভিযান দেখানো হলেও এক বছরে এর দ্বিগুণ অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এসবের কোনো তথ্য রাখা হয়নি। সর্বশেষ কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীতে একটি পাহাড় কাটার বিষয়ে ২৩ জনের নামে এনফোর্সমেন্ট মামলা করেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান। কিন্তু মামলার পুনঃতদন্তে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ, নাসির উদ্দিন রুনু এবং হেলালকে মামলা থেকে বাদ দিতে সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলাম ও পরিদর্শক মো. মুসা ইবনে রহমান।


অভিযোগ উঠেছে প্রায় তিন লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের মামলা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা, লেনদেন করেছেন পাহাড় খেকো দেলোয়ার। মামলার পুনঃতদন্তকারী কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিট কর্মকর্তা, রেঞ্জ কর্মকর্তা, স্থানীয় মেম্বার ও পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়েসের সভাপতির সাক্ষ্য নিয়েছি। সাক্ষীদের বক্তব্যে যাদের নাম আসেনি তাদের বাদ দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে অনৈতিক লেনদেন হয়নি।’ পরিবেশ অধিদপ্তরে কর্মরত কয়েকজন জানিয়েছেন, কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলী, ঘোনারপাড়া, লাইট হাউজপাড়া, কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল, পিএমখালী, লিংকরোড, মহুরিপাড়া, রামুর খুনিয়াপালং, গর্জনিয়া, উখিয়ার জালিয়াপালং, পালংখালী,  রাজাপালং, টেকনাফের হ্নীলা এলাকায় পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা হয়, কিন্তু মামলা হয় না। আবার পরিবেশ অধিদপ্তরের সোর্স হিসেবে কাজ করার ফলে অভিযুক্ত খুরুশকুলের নাসির উদ্দিন রুনু এবং হেলাল পিএমখালী এলাকার দেলোয়ার ও আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেনি পরিবেশ অধিদপ্তর।


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার সভাপতি ফজলুল কাদের বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর যদি প্রতিটি অভিযানের মামলা করত তাহলে কক্সবাজারে এত পাহাড় ধ্বংস হতো না।’ কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় আমরা চেষ্টা করছি। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনৈতিক সুবিধা নিলে ৪০টি অভিযান পরিচালনা হয় কীভাবে। দেলোয়ারসহ সবাইকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে।’


তবে অভিযানের পরও কেন মামলা হয় না তা জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

বাবু/এসআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত