পিরোজপুরের পাড়েরহাটের ঐতিহ্যবাহী বাজপাই জমিদার বাড়িটি হারিয়ে যেতে বসেছে। জমিদার প্রথা বিলোপের পর সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে বাড়িটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একটা সময় রাজা-প্রজা, পাইক-পেয়াদায় মুখরিত বাড়িতে এখন শুধুই নীরবতা। স্থানীয়রা বাড়িটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, রাজবাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণ হলে ভালো একটি পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে। এতে দর্শনার্থীরা যেমন ঘুরে দেখতে পারবে; তেমনই রাজা বা জমিদারদের সঠিক ইতিহাসও জানার সুযোগ হবে।
ব্রিটিশ শাসনামলে পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরে গড়ে ওঠে রাজবাড়িটি। তৎকালীন এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন সূর্য প্রসন্ন বাজপাই। তাকে লোকজন ভালোবেসে পাড়ের বাবু নামেও ডাকতেন। তিনিই এখানে গড়ে তোলেন কাচারিবাড়ি, নিজের সভা ও শয়ন কক্ষ। জমিদারের উত্তরসূরিরা বর্তমানে ভারতের লাহারাবাদে আছেন। তারা এখানে এই বাড়িতে আর আসেননি। জমিদার সূর্য প্রসন্ন বাজপাই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির চাচা ছিলেন। জমিদার বাড়িটি বর্তমানে সরকারের খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জমিদার বাড়িটির সামনে দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত দিয়ে চলে গেছে একটি রাস্তা। সামনেই একটি পুকুর। তার পাশেই উত্তর-পূর্ব প্রান্তে পাড়েরহাট পোস্ট অফিস। দক্ষিণ প্রান্তে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মৎস্য ব্যবসায়ীরা এখানে মাছ বিক্রি করতে এলে জমিদার বাড়িটিতে চোখ বুলিয়ে যান। অন্য এলাকা থেকে আসা অনেকেই স্থানীয় লোকজনের কাছে জানতে চান এ বাড়ির ইতিহাস। দুই একর জমির ওপর নির্মিত এ প্রাসাদের দেয়াল, ইট ও ছাউনি টালি দিয়ে তৈরি। বাড়িটির কোনো কোনো ভবনের ছাদ এখন আর নেই। কোনো কোনো ভবন ছেয়ে গেছে লতা-পাতা-গাছে।
রাজবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সাফায়েত বলেন, জমিদারের এই চিহ্ন মুছে যাওয়ার পথে। এটাকে সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র করা হোক। পর্যটনকেন্দ্র হলে এলাকাবাসীসহ দেশ উপকৃত হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মিলন কুমার দাস বলেন, আগে এখানে অনেক কিছু ছিল। সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। আমার ঘরবাড়ি না থাকায় এখানে বহু বছর ছিলাম। যখন থাকার মতো পরিস্থিতি আর ছিল না তখন নেমে এসেছি। ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মিঠু বলেন, ২০০২ সালে এটা সংস্কার হওয়ার কথা ছিল। বারবার এসে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। সবই ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে। হাসপাতাল ও পার্ক করার কথা বলে মাপা হয়, কিন্তু কিছুই হয় না। এগুলো ভাঙার পরে সবকিছু
অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাড়েরহাট এত বড় একটা বন্দর, এখানে একটা হাসপাতাল হলে ভালো হয়। পাড়েরহাটের রাজবাড়িটা আমাদের একটা ঐতিহ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি বাড়িটির দায়িত্ব না নেন তাহলে এটা ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইমুর হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগে রাতে বাড়ির একটা অংশ বৃষ্টির কারণে ধ্বসে গেছে। যদি সেখানে কোনো মানুষ থাকত তাহলে সে তো মারাই যেতো। এটা আমাদের পাড়েরহাটের একটা ঐতিহ্য। নতুন প্রজন্ম যারা আছে তারা এ সম্পর্কে জানে না। এটা সংরক্ষণ করা গেলে ট্যুস্টি স্পট হতো। এলাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও ভালো জানা যেত। পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, পাড়েরহাটের জমিদার বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ভ্রমণ করে থাকেন।
মূলত জমিদার বাড়িটি অনেক পুরাতন। আমি এটি পরিদর্শন করেছি। অনেক জায়গা নিয়ে এই জমিদার বাড়িটি রয়েছে। জমি আছে, পুকুর আছে, একটি পুরাতন ভবন রয়েছে। পাশের একটি ভবনে ভূমি অফিসের কার্যক্রমও চলমান। আমরা এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবে এটির জন্য আরও বড় উদ্যোগ প্রয়োজন। এ জন্য প্রততত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে বাড়িটি সংরক্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
-বাবু/এ.এস