নেত্রকোনার কেন্দুয়া শহীদ মিনার যেন মলমুত্র ত্যাগের স্থানে পরিণত হয়েছে। শহিদ মিনারের মুল ফটকের সামনে পথচারী, অটোরিকশা ও সিএনজি চালক থেকে শুরু করে সকল যাত্রীরা শহিদ মিনারের দেয়ালে মলমুত্র ত্যাগ করে শহিদ মিনারটিকে করছে অসম্মান।
স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, ভাষার মাস এলেই প্রশাসনের উদ্যোগে শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারীর আগে কিছুটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হয়। শহীদ দিবস শেষ হলে সারাবছরই অযত্ন অবহেলা পড়ে থাকে শহিদ মিনারটি। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের কারোই নজরে পড়েনা শহিদ মিনারটি।
অথচ কেন্দুয়া প্রবেশ করতেই সামনে পড়বে শহীদ মিনারটি। তাও প্রশাসনের নজরে না নেয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দুয়ার শহিদ মিনের এই দৃশ্য দেখে স্থানীয় অনেকে আরো বলেন, বাংলা ভাষা এখন আর্ন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃতি পেলেও নিজেরাই এর গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে অবমাননা করছি। প্রমানস্বরুপ ভাষার মাসেও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে শহিদ মিনার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,কেন্দুয়া জয়হরি স্পাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সংলগ্ন পুনসংস্কার করা শহীদ মিনারের সামনের সড়কে থাকে সিএনজি ও অটোরিকশা। আর এগুলো চালক এবং আশপাশের মানুষ প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে গিয়ে শহীদ মিনারের ফটক এবং দেয়ালকে মলমুত্র ত্যাগের স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। যা দেখে স্থানীয় অনেকের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
স্থানীয়সহ সিএনজি ও অটোরিকশা চালকদের প্রশাসনের কাছে দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল একটা পাবলিক টয়লেটের। অটোরিকশা চালকরা বলেন, আমাদেরকে যদি কাছাকাছি একটা পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তাহলে এরকম কাজ হবে না পাশাপাশি প্রশাসন যদি কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে অভ্যস্থ হওয়া সাধারণ মানুষও এমন কাজ আর এখানে করবে না। এদিকে গাড়ি চালক অনেকেই ভাষার মাসের এবং দিবসের গুরত্ব সর্ম্পকে না জানলেও বেশির ভাগ চালকের জানার এবং মানার চেষ্টা করবে বলে তাদের অভিমত।
সিএনজি চালক কামরুজ্জামান বলেন, সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকেই আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। তাদের স্মরণে নির্মিত এই শহীদ মিনারের সামনে এবং দেয়ালে মলমুত্র ত্যাগ খুবই লজ্জার। তবে তিনি দাবী করে বলেন, শহীদ মিনারের সামনে সড়কে অনেক আগে থেকেই সিএনজি এবং অটোরিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে যে কারণে তাদের এখানে আসতে হয় এবং অনেকে শহিদ মিনারের দেয়ালে জেনে না জেনে মলমুত্র ত্যাগ করে থাকে।
পথচারী মেহেদী হাসান বলেন, শহীদ মিনারের দেয়ালটিতে মলমুত্র ত্যাগ করে যাচ্ছে এখানকার লোকজন অবলীলায়। সাধারণ মানুষের তো এসব নিয়ে ভাবনা নেই। কিন্তু প্রশাসন নজরদারী করলে মুত্র ত্যাগ তো দূরের কথা মানুষ থুতু ফেলতে সাহস করবে না।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাজিব হোসেন বলেন, আগামী ১৪ তারিখ আমাদের মিটিং রয়েছে, এই দিন শহিদ মিনারের বিষয়ে আলোচনা হবে এবং যা যা করনীয় তা করা হবে।
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই ২১ ফেব্রুয়ারী আসলে আমরা সোচ্চার হই, তবে আগামীকাল ভাষা দিবসের প্রস্তুতিসভায় এ বিষয়ে চুড়ান্ত ভাবে আলোচনা করে সারাবছর যাতে শহীদ মিনারকে সম্মানের জায়গায় রাখতে পারি, সেজন্যে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।