নতুন বল দুইদিকেই সুইং করাতে পারেন, এমন একজন পেসারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ ক্রিকেট পার করেছিল লম্বা সময়। ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশ স্পিন নির্ভর ক্রিকেট শক্তি। মানসম্মত পেসার খুঁজে পাওয়াই এখানে কঠিন, আর বলে কয়ে সুইং আদায় করতে পারেন এমন বোলার তো রীতিমতো সোনার হরিণ।
অবশেষে সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহির মাঝে মিলেছে সুইং করার সামর্থ্য। রাহি শুধু সুইং করাতেই পারেন এমনটাও নয় বরং বল নিয়ন্ত্রণও করতে জানেন ভালোভাবে। বাংলাদেশ সাবেক কাপ্তান মাশরাফি মর্তুজা একবার বলেছিলেন, আবু জায়েদ রাহি বাংলাদেশের একমাত্র বোলার, যে বল করার আগেই বলতে পারে এটা ইনসুইং নাকি আউটসুইং। সেই রাহিই এখন প্রতিযোগিতার ভিড়ে ২২ গজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন।
" align=
২ আগস্ট ১৯৯৩ সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন পেসার আবু জাহেদ রাহি। সিলেটের আবহাওয়া তুলনামূলক পেসার বান্ধব, সেই শহরে জন্মগ্রহণ করেন আবু জায়েদ রাহিও শুরু করেন পেস বোলিং। এরপর ধীরে ধীরে জায়গা করে নেন ঘরোয়া ক্রিকেটে; একবার অবশ্য ক্রিকেট ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন দেশ ছেড়ে বিদেশে, তবে ব্যাট বলের টানে আবারও ফেরেন দেশের মাটিতে। প্রত্যাবর্তনটা হয়েছিল মনেরি মতন করে। বিপিএল, এনসিএলে পারফর্ম করে চলে এসেছিলেন লাইমলাইটে, ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্যাপও পেয়ে যান রাহি।
এই রাহির হাত ধরেই প্রথম টেস্ট ক্রিকেটে শক্ত পেস আক্রমণ গড়ে তোলে বাংলাদেশ। এরপর তরুণ শরীফুল, ইনজুরি থেকে ফেরা তাসকিন আহমেদ আর ইবাদত, খালেদরা যোগ দিয়েছেন পেস-বিপ্লবে। কিন্তু শুরুর পথপ্রদর্শক আবু জায়েদ রাহি মাঝপথে হারাতে শুরু করেন পথের দিশা। একাদশের ফার্স্ট চয়েজ বোলার হয়ে যান ব্যাক আপ সদস্য। অবশ্য এমন অনাকাঙ্খিত বাদ পড়ার যৌক্তিক কারনও আছে। আবু জায়েদের শক্তির জায়গা সুইং হলেও দুর্বলতা আছে গতিতে। আধুনিক ক্রিকেটে একজন পেসার হিসেবে যেখানে সবার লক্ষ্য থাকে ঘন্টায় ১৪০ কিমিতে বল করার সেখানে রাহির বলের গতি ১৩০ ছুঁই ছুঁই। ধীর গতির এই সুইং ডেলিভারিগুলো ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট হয় না।
রাহির হাত ধরেই প্রথম টেস্ট ক্রিকেটে শক্ত পেস আক্রমণ গড়ে তোলে বাংলাদেশ
২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অভিষিক্ত আবু জায়েদ রাহি প্রশংসা কুড়িয়েছেন কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপের। কিন্তু এখন সেসব অতীত; যে সম্ভাবনা নিয়ে রাহির আগমন ঘটেছিল সেটা এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। নিজেকে আবারো ফিরে পাওয়ার চাবিকাঠি আবু জায়েদ রাহির হাতেই। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গেলে হয়তো তাসকিন, ইবাদতদের মতই নতুন রাহিকে পাবে বাংলাদেশ, সেজন্য অবশ্য থাকতে হবে জেদ আর কথোর পরিশ্রম।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থমকে আছে রাহির
রাহি পেয়েছেন লাল-সবুজের জাতীয় দলে ১৩ টেস্ট, ২ ওয়ানডে আর ৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ। ২০১৮তে অভিষেকের পর শেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০২১ এ। ব্যাস, ৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থমকে যায় সেখানেই। এরই মধ্যে ২০২২ এ বিস্ফোরক এক মন্তব্য করে বসেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফরম্যান্স করেও জাতীয় দলে ফেরার কোনো সুযোগ পাচ্ছিলেন না। হয়তো সেই ক্ষোভেই বলে বসেন যে- ‘জাতীয় দলে লবিং না থাকলে সুযোগ হয় না’। যদিও তিনি পরে তা অস্বীকার করেছেন। তার দাবি- ভুল ভাবে সংবাদ উপস্থাপন করা হয়েছে। ততোক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। জাতীয় দলতো পরের বিষয় এ বছর ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর বিপিএল-এও কোনো ফ্র্যাঞ্চাজি তাকে দলে নেয়নি। আসলেই কি অবিচার হচ্ছে রাহীর সঙ্গে! নাকি নিজের ভুলেই ধীরে ধীরে পথ হারিয়েছেন।
নিজেকে ভেঙেচুরে আবার গড়তে চান আবু জায়েদ রাহি
রাহী নিজেই জানিয়েছেন নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার ও লক্ষ্যের কথা। সেখানে রাহি স্পষ্ট করে জানালেন এখন ব্রাদার্সের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সত্যি কথা বলতে ক্রিকেট ছাড়া আমার জন্য কোনো কিছুই ভাবা সম্ভব নয়। আর তাই জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরতে চাইলে ঠিক পেসের জায়গায় কাজ করতে হবে তাকে। নিজেকে ভেঙেচুরে আবার গড়তে হবে। সেক্ষেত্রে রাহির সামনে আদর্শ হতে পারেন তাসকিন আহমেদ। একটাসময় গতিময় বোলিং করেও ব্যাটারদের চাপে ফেলতে পারতেন না তাসকিন, অথচ লম্বা সময় পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফেরা তাসকিন এখন বিশ্বসেরা পেসারদের মাঝে একজন।
সহজ ভাষায় বললে, নিজের সুইং ঠিক রেখে বোলিংয়ে আরো পাঁচ-সাত কিংবা দশ কিমি গতি বাড়াতে পারলে হয়তো ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলতে সক্ষম হবেন আবু জায়েদ রাহি। আর সেটা করতে না পারলে দলে ফেরাটা তাঁর জন্য প্রায় অসম্ভব। নিজের খেলায় উন্নতি করলে আমার বিশ্বাস আবারো সুযোগ আসবে বলে বিশ্বাস রাহির।