চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও কৌশলে এই দায় তারা চাপিয়ে দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ওপর। তবে অভিযোগ আছে চসিক এর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে নগরীর ড্রেন, ফুটপাথ এমন কি খাল দখল এখনো থেমে নেই৷ খোদ চসিক এর হেলদি ওয়ার্ডের তকমা লাগানো জামাল খান ওয়ার্ডেই চলছে ড্রেনের ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, আরো বেশ কয়েক মাস আগেই বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। এছাড়া নিজেদের ড্রেন রক্ষায় কোনো পদক্ষেপই নেয়নি চসিক ৷ অন্যদিকে সিডিএ নির্মাধীন ভবনটি নকশা না মেনে নির্মাণ করছে বললেও সেটির নির্মাণ কাজ বন্ধে কার্যকর কোন উদ্যোগ এখনো নিতে পারেনি।
চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান ওয়ার্ডের অন্তর্গত আসকার দিঘীর পূর্ব দিকের সরু সড়কের দক্ষিণ প্রান্তে নির্মিত হচ্ছে একটি বহুতল ভবন। স্থানীয়দের অভিযোগ ভবনটির পেছনের অংশে একটি বড় ড্রেন আছে। যে ড্রেন দিয়ে আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভবন নির্মাণ বিধি মোতাবেক ভবনের চার পাশে যে পরিমাণ জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণ করার কথা ভবন মালিক তা তো মানছেনই না, উলটো ভবনটির পেছনে থাকা ড্রেনের ভেতরে প্রায় দুই ফুট জায়গা নিয়ে ভবনের সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ সিডিএ বলছে ড্রেন থেকে অন্তত ১৫ ফুট জায়গা ছেড়ে ভবনটি নির্মাণ করতে নকশা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবেদককে বলেন, এই ভবনটির বিষয়ে আমরা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকে একাধিকবার অভিযোগ করেছি৷ তিনি নির্মাণস্থলে এসে ঘুরে গেলেও আজ অবধি কোন ব্যবস্থা নেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ এলাকার অন্য সব বিষয়ে ফেসবুকে প্রতিদিন লাইভ দেয়। কেউ ফুটপাথে মালামাল রাখলেও তিনি লাইভে এসে সব ফেলে দিয়ে ফুটপাথ দখল মুক্ত করে। লাইভে ভালো ভালো কথা বলে তিনি এখন ফেসবুক সেলিব্রেটি কাউন্সিলর বনে গেছেন। অথচ যখন উনার কাছের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠে তখন তিনি বিষয়টি বেমালুম চেপে যান। এই ভবনটির ক্ষেত্রেও কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পাশের পুরোনো ভবনের চেয়ে নির্মাণাধীন ভবনটির সীমানা ড্রেনের দুই ফিট ভেতরে নির্মিত হয়েছে। তবে সেখানে দায়িত্বরত নির্মাণ সুপারভাইজার পাশের ভবনের চেয়ে তাদের সীমানার পার্থক্য ২০ ইঞ্চি দাবি করেন। অন্যদিকে ভবন মালিক মানস দাশের ভাষ্য, "আমি আমার জায়গাতেই সীমানা দেয়াল নির্মাণ করেছি। সিডিএ আমাকে কোনো জায়গা ছাড়তে বলে নাই।" ১৪ মে সকালেও সিডিএ এর লোকজন এসে সব ঠিক আছে বলে ক্লিয়ারেন্স দিয়ে গেছে বলে জানান ভবন মালিক মানস দাশ৷ এক পর্যায়ে তিনি এই প্রতিবেদককে নিউজ না করতে টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও করেন৷ যার ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। নিজেকে চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিকের বাবা পরিচয় দিয়ে কীভাবে তিনি আরেকজন সাংবাদিককে অনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছেন জানতে চাইলে মানস দাশ বলেন, "আরো যারা এসেছে সবাইকে টাকা দিয়েছি।" যদি কোন অবৈধ কাজ না-ই করে থাকেন তাহলে কেন এভাবে টাকা বিলি করছেন ? এই প্রশ্নের মানস দাশ বলেন, "উনারা কষ্ট করে এসেছে তাই একটু চা পানির পয়সা দিয়েছি৷ "
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সিডিএ'র ভবন পরিদর্শন বিমান বড়ুয়াকে একাধিকবার এই নির্মাণাধীন ভবনের সাইটে দেখা গেছে। তবে এই নকশা বহির্ভূত নির্মাণ কাজ একটি দিনের জন্যেও বন্ধ হয়নি৷ এলাকাবাসীর মতে কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের ঘনিষ্ঠ লোক হওয়ায় মানস দাশ কোন কিছুকেই পরোয়া করছেন না। এই বিষয়ে সিডিএ'র ভবন পরিদর্শক বিমান বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, "আমি একাধিকবার সেই নির্মাণাধীন ভবনে গিয়েছি সেটি সত্য। একই সাথে সেই ভবনের মালিককে কাজ বন্ধ রাখতে নোটিশও দিয়েছি। কিন্তু তিনি তো কথা শুনছেন না। এর চেয়ে বেশী কিছু করার এখতিয়ার আমার নেই।"
ভবনটি নকশা বহির্ভূত ভাবে নির্মিত হচ্ছে এবং বার বার বলার পরও ভবন মালিক এর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখছেনা স্বীকার করে সিডিএ'র অথরাইজড অফিসার (২) তানজিব হোসেন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পর থেকে আমরা পানি নিষ্কাশনের ড্রেন থেকে অন্তত ১৫ ফুট জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়ে থাকি। আসকার দিঘীর পূর্ব পাশে মানস দাশের ভবনটির সব দিক থেকেই নকশা বহির্ভূত নির্মাণ কাজ হয়েছে। আমি নিজে ইতিপূর্বে সরেজমিন সেখানে গিয়ে সেখানকার মিস্ত্রিদের দিয়ে একটি কলাম ভেঙ্গে দিয়ে এসেছিলাম। তাঁকে (ভবন মালিক) নোটিশ দিয়ে ভবনটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। আমি নিজেও মানস দাশকে একাধিকবার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি কিন্তু তিনি কারো কথাই মানছেন করছেন না।" আমরা দেখেছি, কেউ সিডিএ'র নির্দেশনা অমান্য করলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হয়, কিন্তু এই ভবন মালিকের ক্ষেত্রে সেটি কেন করছেন না জানতে চাইলে সিডিএ'র অথরাইজড অফিসার (২) বলেন, "দুই একদিনের মধ্যেই আমরা সেই ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।" সেই সাথে ভবন মালিকের বিরুদ্ধে আরো কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি৷
নিজ এলাকায় চসিক এর ড্রেনের জায়গা না ছেড়ে উলটো ড্রেনের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণের বিষয়টি জেনেও এখন পর্যন্ত কি ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে জামাল খান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো (এসএমএস) হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।