গাজীপুরের শ্রীপুরে দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচার, অবৈধভাবে দলীয় মনোনীত ও নানা অপকর্মে জড়িত সাতখামাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়েশা আকতার দীপার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টায় ওই স্কুলের সামনে মাওনা-বরমী সড়কে সাবেক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী এসব কর্মসূচি পালন করে।
এলাকাবাসী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি, সহকর্মী শিক্ষকদের সাথে নানা অত্যাচার, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত প্রধান শিক্ষক। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবী করতে হবে।
মানব বন্ধনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী মাহফুজ আহম্মেদ তার বক্তব্য বলেন, প্রধান শিক্ষক একজন দুর্নীতিবাজ। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা প্রধান শিক্ষকের কাছে তাদের প্রয়োজনে যেকোনো দরখাস্ত নিয়ে গেলে স্বাক্ষর করতে চায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, প্রধান শিক্ষক তার ক্ষমতার দাপটে প্রায় সময়ই শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
শিক্ষকেরা অসুস্থ থাকলে ছুটি না দিয়ে ক্লাশে উপস্থিত থাকতে বলেন। গত চার মাস পূর্বে একজন শিক্ষিকা তিন মাসের অন্ত:স্বত্তা থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে দুই দিনের ছুটির আবেদন করলে তার ছুটি মঞ্জুর করেনি। পরে ওই শিক্ষিকা নিয়মিত অটোরিক্সায় বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করলে তার সন্তান নষ্ট হয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
স্কুল সম্পর্কিত কোন বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলে কোন সমাধান পান না তারা। গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রত্যেক শিক্ষক ও স্টাফদেরকে সকাল ৮ টায় অফিসে আসার নির্দেশ দিয়েছিল। একজন শিক্ষিকা অসুস্থ থাকার কারণে ওই সময়ের কিছুক্ষন পর স্কুলে আসায় তার সাথে প্রধান শিক্ষক দুর্ব্যবহার করেন।
একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে বিদ্যালয়ের দপ্তরি সাব্বির আহমেদ ওই শিক্ষিকাকে শ্রেণীকক্ষে দীর্ঘসময় তালাবদ্ধ করে রাখেন। কেন একজন শিক্ষিকাকে তালাবদ্ধ করে শ্রেণীকক্ষে আটকে রাখলেন এ কথা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক অপর এক শিক্ষিকার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে ওই শিক্ষিকাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চেয়ার থেকে উঠে গায়ে হাত তোলার জন্য এগিয়ে যান। পরে হাত তুলতে না পেরে রাগে সে নিজেই টেবিলে আঘাত করে তার হাতে জখম করে। আরেক শিক্ষিকাকে স্কুলে আসার পর প্রায়ই বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়।
ওই সহকর্মীর শরীর গন্ধ করে এ কাথা বলে তাকে বাড়ী থেকে আবার গোসল করে আসতে বলে। এ নিয়ে ওই শিক্ষিকার পরিবারেও ঝগড়া লেগেই থাকে। গত ৮ তারিখ থেকে প্রধান শিক্ষক অসুস্থতার ছুটি কাটাচ্ছে।
এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আয়েশা আকতার দীপা জানান, তার বিরুদ্ধে মানববন্ধনে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সবগুলো মিথ্যা। গত ৩০ মে বিদ্যালযের চারজন শিক্ষকের নেতৃত্বে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করা হয়। এ বিষয়ে তিনি শ্রীপুর থানায় দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন বলেন, প্রধান শিক্ষক ১৫ দিনের অসুস্থতাজনিত ছুটিতে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অত্যাচার, দুর্নীতি ও অনিয়মের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। পেলে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমানীত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।