দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু গত দুই দশকে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।
অনেকের মতে ২০০০ সালের আগে শিক্ষাব্যবস্থায় ছিল প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার পাঠ। আর বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন সমাজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আগে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে হতো না।শিক্ষকরা ছিলেন আদর্শবান এবং শিক্ষার্থীরা ছিল শিক্ষক ভক্ত।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনা বিমুখ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। কথা গুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক গোলাম ফারুক। যিনি ফারুক স্যার নামে সবার কাছে পরিচিত।
মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে কাজ করেছেন দীর্ঘ ৩৫ বছর। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের তিনি সন্তানের মতই মমতা ও ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখতেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সর্বদা খোঁজ-খবর রাখতেন।
দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে নীতির প্রশ্নে তিনি অটল ছিলেন। ফলে তার সব ছাত্রছাত্রীর কাছে ছিলেন আদর্শ ও নীতির মূর্তপ্রতীক। বিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মকাণ্ডে তার ওপর বিদ্যালয় প্রশাসনের ছিল গভীর আস্থা ও নির্ভরতা। ছাত্রছাত্রীদের ছিল অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধা।
তিনি দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৮৪ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। আর দুই হাজার ১৯ সালে তিনি অবসরে যায়।সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত গোলাম ফারুক জেলার শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৮০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ৮৩ সালে বিএসি পাস করেন তিনি।
তিনি বলেন,আগের শিক্ষা ব্যবস্থায় ছিল সম্মান। বিদ্যালয়ে কোনোরকম ছিল না উচ্ছৃঙ্খলতা। ছিল না কোনো কমিটি নিয়ে বিরোধ।। বিরতি ছাড়া কোনো প্রকার ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। শিক্ষার মান সম্পূর্ণরূপে অভিভাবকদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।
ছাত্রছাত্রীদের শাসন করলে কোনো অভিভাবকের কাছে অসন্তোষ ছিল না। অবশ্যই বেত নিয়ে শিক্ষকরা ক্লাসে যেতেন এবং যদি প্রয়োজন মনে করতেন, তাহলে শাসন করতেন। সরকারি কারিকুলাম অবশ্যই শিক্ষকরা মেনে চলতেন। প্রতিটি ক্লাসের নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষক ক্লাস রুমে হাজির থাকতেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাসের পড়া তিনি ক্লাসে শেষ করাতেন। যারা দুর্বল শিক্ষার্থী ছিলেন তাদেরকে বাড়িতে আলাদাভাবে পড়াতেন। অনেক ছেলে মেয়ের কাছ থেকে টাকাও নেন নাই।
বর্তমানে শিক্ষায় কোচিং একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ছেলে-মেয়েরা কেন জানি না বুঝে সারাদিন কোচিং কোচিং করে মাথা নষ্ট করে। ক্লাসের পড়া ক্লাসে শেষ করলে কোচিং এর প্রয়োজন হয় না। কোচিং এর কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার ও আচরণে বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আগের দিনের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষকদের সাথে ভালো ব্যবহার করতো।
আমার অনেক ছাত্র ভালো অবস্থানে রয়েছে। তারা মাঝে মাঝে আসেন দেখা করতে। তাদের যে ভক্তি শ্রদ্ধা এটাই আমার জীবনের প্রাপ্তী।
বর্তমানে সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে শিক্ষকরাও একটু বেশি বাণিজ্যিক হয়েগেছে। হা জীবনে অর্থের প্রয়োজন সবার থাকে তবে আপনার পেশা বা সম্পর্কটাকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। এখনকার শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক আর শ্রদ্ধাবোদ আর আগেকার শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক, শ্রদ্ধাবোদ অনেক পার্থক্য।এর একটা কারণও রয়েছে সেটা হলো শিক্ষকদের কাছ থেকে শাসন করার অধিকার তুলে নেওয়া। ছেলে মেয়েদের একটু শাসন করতেই হবে তা না হলে তারা কথা শুনবে না। কথায় আছে শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।
শিক্ষক শাসন করবে আদর করবে এটাই নিয়ম। আমাদের সময়ের ছেলে মেয়েদের সাথে দেখা হলে এখনো যে শ্রদ্ধা করে। এখনকার ছেলে মেয়েদের মাঝে তেমনটা দেখা যায় না। এটা তাদের দুষ বলবো না। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাও এরজন্য কিছুটা দায়ি।
শিক্ষক হলেন জাতির আলোক বর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যতের রূপকার। শিক্ষকতা হলো এমন একটি পেশা যা অন্যান্য পেশার সৃষ্টি করে। একজন শিক্ষকের ভূমিকা ব্যতীত কোন জাতিই শিক্ষিত জাতিতে পরিণত হতে পারে না।
শিক্ষার হাতে-খড়ি যদিও শুরু হয় পরিবার থেকে, কিন্তু তার পূর্ণতা পায় একজন শিক্ষকের হাতে। একটি শিক্ষিত জাতি গঠনের প্রতিটি পদক্ষেপে শিক্ষকের গুরুত্ব লক্ষণীয়। সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে মুখ্যভূমিকা পালন করেন। তাই তো শিক্ষককে বলা হয় সন্তানের দ্বিতীয় জন্মদাতা।