শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
সংবিধান মেনে বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের সুযোগ কতটা?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৫৯ PM আপডেট: ২৩.১০.২০২৪ ১:৫৭ PM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দায়িত্ব পাওয়া রাষ্ট্রপতিকে এবার রাষ্ট্র ‘সংস্কার’ এবং ‘ফ্যাসিবাদ’ বিতারণের হাওয়ায় অপসারণের দাবি প্রবল রূপ নিয়েছে।

শেখ হাসিনার উৎখাতে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে। বঙ্গভবনের সামনে গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে বিক্ষোভ, নাটকীয়তা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ওই দাবির কথা বলতে শুরু করেছিলেন অক্টোবরের শুরুতেই। 

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার ‘পদত্যাগের’ বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক বক্তব্য সামনে আসার পর এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও একই ধরনের ভাবনার কথা বলতে শুরু করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, অন্তর্বর্তী সরকার কি চাইলেই রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করতে পারে?

সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন, সংসদ যেহেতু কার্যকর নেই, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে থেকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব না। তবে তাকে বিদায় করা অসম্ভবও না। তেমন মনে করলে সরকার রাষ্ট্রপতিকে চলে যেতে বলতে পারে। রাষ্ট্রপতি নিজেও পদত্যাগ করতে পারেন। সরকার তখন নতুন কাউকে রাষ্ট্রপতি করতে পারে। তবে বর্তমান সংবিধানে থেকে সেটা সম্ভব নয়।

অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর প্রশাসনের শীর্ষ পদের অধিকারীরা বদলে গেলেও ‘অনিবার্য’ কারণে রাষ্ট্রপ্রধানের পদে রয়ে গেছেন মো. সাহাবুদ্দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ গত ৩ অক্টোবর এক ফেসবুক পোস্টে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি সামনে আনেন। পরে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমও একই দাবির কথা ফেসবুকে বলেন।

পাশাপাশি নতুন এক আলোচনা ঘিরে সেই দাবি ফের জোরালো হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যাওয়ার আগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কি না- আড়াই মাস পর হঠাৎ সেই বিতর্ক সামনে এসেছে রাষ্ট্রপতির এক মন্তব্যের কারণে। ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন ‘শপথ ভঙ্গ করেছেন’ দাবি করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মনে করিয়ে দিয়েছেন, এরপরও তাকে রাষ্ট্রপতি পদে রাখা চলে কি না, তা বিবেচনার সুযোগ সংবিধানে আছে।

সংবিধানে কী বলে?
৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।

৫২ অনুচ্ছেদে সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার সুযোগ আছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং সংসদের কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগবে। ৫৩ অনুচ্ছেদে শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে অপসারণের যে কথা বলা আছে, সেখানেও সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সমর্থনের শর্ত আছে।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন জানানোর পর ৬ অগাস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ফলে সংসদে অভিসংশনের কোনো সুযোগ এখন নেই বলে মন দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

অপসারণের সুযোগ কোথায়?
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ শাহদীন মালিক বলেন, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে এখন অপসারণ করা যাবে না। তিনি বলেন, “যুদ্ধাবস্থা হলে রাষ্ট্রপতি সংসদ পুনর্বহাল করতে পারেন। কিন্তু এখন তো যুদ্ধাবস্থাও নয়।”

আরেক আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বা অভিসংশনের আর এখন কোনো আইনি পন্থা নেই। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে করতে পারেন।…সংবিধানে বলা আছে। না, আর কোনো সুযোগ নেই এখন।” এমনকি এখন রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে আদালতের মতামত চাওয়ারও কিছু নেই বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

তিনি বলেন, “আদালতে মতামত চাওয়ার বিষয়টি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। সেটা হল- কোনো আইন নিয়ে যদি কোনো ব্যত্যয় বা ব্যাখ্যার দরকার হয়, বোঝা যাচ্ছে না- সেখানেই কেবল রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাইতে পারেন।”

পদত্যাগ না করলে কী করতে হবে?
তিনি বলেন, “পদত্যাগ করতে বলতে হবে।” সেটা কে বলবে? শরীফ ভুঁইয়া বলেন, “উপদেষ্টাদের কেউ বলবেন। উপদেষ্টা পরিষদে প্রস্তাব নিয়ে তাকে পদত্যাগ করতে বলতে হবে। এরপর আরেকজনকে রাষ্ট্রপতি করবেন। তাকে প্রধান উপদেষ্টা শপথ পড়াবেন।”

কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষমতা তো সংসদের। এখন সংসদ নেই, তাহলে নতুন রাষ্ট্রপতি হবে কী করে? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখন তো সাংবিধানিক সরকার নেই। এটা বিপ্লবী সরকার। এখন সবকিছু সংবিধান মেনে চলবে না। কিছু সংবিধান মেনে চলবে, কিছু মেনে চলবে না। সংবিধানের স্পিরিটে কাজটা করতে হবে। এটা জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী হবে।”

প্রসঙ্গত, দেশের ইতিহাসে একবারই রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে তার আগেই তিনি পদত্যাগ করে ফেলায় সেই পথে আর হাঁটেনি সংসদ। ২০০১ সালের নভেম্বরে বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ২০০২ সালে অপসারণের উদ্যোগ নেয় তখনকার সরকার। সংসদে সেই প্রস্তুতির মধ্যে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত