একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে শাহবাগ, পল্টন ও মতিঝিল তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে। আজ বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকেই যানজটের কারণে অচল হয়ে পড়ে ব্যস্ত তিনটি এলাকা।
মূলত পল্টনে বিএনপি ও মতিঝিলের জামায়াতের পৃথক রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্ট হয়। এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধীরে ধীরে যানজট শুরু হয়, যা বিকাল ৩টা পর্যন্ত তীব্র আকার ধারণ করে।
ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির কারণে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের উদ্যোগে পল্টনে আয়োজিত বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ ঘিরে রাজধানীতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে হাজারো নেতাকর্মী বাসে রাজধানীতে প্রবেশ করতে থাকেন। এতে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতেও যানজট তৈরি হয়। সমাবেশের মূল কেন্দ্র পল্টন মাঠ, তবে এর প্রভাব পড়ে আশপাশের এলাকাগুলোতেও। প্রেসক্লাব মোড়, জিরো পয়েন্ট, দৈনিক বাংলা মোড়, বিজয়নগর, নাইটিঙ্গেল এবং মতিঝিলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলিস্তান থেকে এয়ারপোর্ট ও বাড্ডাগামী শতাধিক যানবাহন বিজয়নগর থেকে শান্তিনগর-মৌচাক পর্যন্ত একেবারে থমকে গেছে। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বাস থেকে নেমে পড়লেও বাসগুলো মাঝ রাস্তায় আটকে রয়েছে। মানুষের ভিড়ে অনেক সড়কে রিকশা চলাচলের জায়গাও নেই, এমনকি হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
সমাবেশ কেন্দ্র করে পল্টন, গুলিস্তান, মৎস্য ভবন মোড়, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ, শাহজাহানপুর, বেইলি রোড, মতিঝিল, পুরানপল্টন, কাকরাইল ও ফকিরাপুল এলাকায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
এই এলাকাগুলোতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে—যেমন: ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল, মতিঝিল মডেল স্কুল, নটর ডেম কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানের ছুটি একসাথে হওয়ায় যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। অলিগলি ও প্রধান সড়কগুলোতেও যানবাহন আটকে আছে। অনেক অভিভাবককে রিকশা থেকে নেমে সন্তানদের নিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
কাকরাইল মোড়ে আটকে থাকা ভিক্টর পরিবহনের বাসচালক সজীব বলেন, ‘আমি এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে আছি। কোনও দিকেই যেতে পারছি না। যাত্রীরাও বাস থেকে নেমে পড়েছেন। আশপাশের প্রায় সব সড়কেরই একই অবস্থা।’
যানজটে আটকে থাকা সিএনজি চালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আজ খুব খারাপ দিন গেছে। সিএনজির জমার টাকাটাই উঠাতে পারব না। এখন পর্যন্ত মাত্র একটা ট্রিপ মেরেছি। যানজটের কারণে কাকরাইল-নাইটিঙ্গেল এলাকা থেকে বের হতে পারছি না।
জ্যামে অতিষ্ঠ যাত্রী ইমন বলেন, সকাল ১১টায় উত্তরা থেকে বের হয়েছি, এখন পর্যন্ত মতিঝিল পৌঁছাতে পারিনি। শান্তিনগরেই আটকে আছি। প্রচণ্ড গরমে এই যানজট একেবারেই অসহনীয়।
ডিএমপি ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল ধীরগতি। তবে রাস্তায় গাড়ির চাপ রয়েছে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মাঠে আছি।