তরুণ প্রজন্মকে গাছের সাথে পরিচিত হতে, আগামীর সবুজ বাংলাদেশ গড়তে হলে বৃক্ষমেলায় আসতে হবে। জাতীয় ফল কাঁঠাল, জাতীয় গাছ আম, ফুলের রাণী গোলাপসহ বিভিন্ন রকমের ফল, ফুল, ওষুধিসহ বিচিত্র ধরণের পসরায় সাজিয়ে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠের টেনিস গ্রাউন্ডের পাশে ২১ দিন ব্যাপী বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
৭ জুলাই, বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার। মেলা চলবে জুলাই মাসব্যাপী।
বৃক্ষমেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত জি এম রবিউল ইসলাম বলেন, প্রায় বছর দশেক ধরে এখানে বৃক্ষমেলা হয়ে আসছে।
সোমবার বৃক্ষমেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানান, এবার মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬১টি। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১০টি। বিনা টিকেটে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে, কোনো টিকিটের প্রয়োজন নেই। রবিবার (১২ জুলাই) পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৯টি বৃক্ষ ০৯ লাখ ২৯ হাজার ৬১৫ টাকার বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা বিক্রয় হইছে। গতবছর জুলাই আন্দোলনের কারণে প্রায় সপ্তাহখানেক টোটাল বেচাকেনা বন্ধ ছিলো। সে বছর ২৯ হাজার ২৫৬টি বৃক্ষের মূল্য ছিলো ৩৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৫০ টাকার চারা বিক্রয় হইছিল।
সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফলজ ও ফুলের চারা। প্রতিদিন মেলায় অনেক বৃক্ষানুরাগীর সমাগম হচ্ছে। বছর বছর মেলার বিক্রিও বেড়েছে। এ বছর গত বছরের তুলনায় বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
বৃক্ষমেলার পরিবেশটাই এমন যে এখানে এলে মন ভালো হয়ে যায়। ফুলেফলে–লতাগুল্মে যেন এক সাজানো বাগান। প্রতিটি স্টলের ভেতরে, সামনের খোলা মাঠে সারি সারি সাজানো বিচিত্র রকমের গাছগাছালির সমাবেশ। চারদিকে সবুজের নিবিড় সন্নিবেশ। গাছের ডালে ডালে ঝুলছে লাল, হলুদ, সবুজ আম। কাঁঠাল, আমলকী, করমচার মতো দেশি ফল তো আছেই। কম চেনা ছাদবাগান করার জন্য মাঝারি ধরণের কাঠাল, সাদা জাম, ব্লাগবেঙ্গল জাতের মতো ফলও আছে।
ফরেস্ট রেঞ্জার সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের মো. ফজলুল হক বলেন, ‘আশা করছি এবারের বৃক্ষমেলায় গতবছরের চেয়ে ভালো সাড়া জাগবে।’
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃক্ষ বিক্রি করছে নিজাম নার্সারি। এই নার্সারির আব্দুল্লাহ জানান, তার স্টলে প্রায় ১৫ জাতের পেয়ারার চারা রয়েছে। কাঠজাত জাতীয় গাছের মধ্যে রয়েছে মেহগনি ও সিরিজ গাছ। কাঠজাতীয় চারা কম আসার কারণ বলেন, নার্সারি বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে রয়েছে এজন্য গাছগুলো তোলা সম্ভব হয়নি, তাছাড়াও শহরে এ জাতীয় গাছের চাহিদা খুবই কম। তাদের স্টোলে ৪০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকার গাছ রয়েছে। ইন্ডিয়ান একটি বাঁশগাছের দাম হাঁকিয়েছে ৮ হাজার টাকা।
খুলনা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি এস এম বদরুল আলম রয়েল বলেন, ‘দেশি-বিদেশি, ছাদবাগানসহ বিভিন্ন ধরণের বৃক্ষ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম থেকে ক্রেতা সমাগমও বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বনবিভাগ ও জেলা প্রশাসন নিয়মিত আমাদের খবরাখবর নিচ্ছেন। ‘
তিনি আরও বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে গাছের সাথে পরিচিত হতে, আগামীর সবুজ বাংলাদেশ গড়তে হলে বৃক্ষমেলায় আসতে হবে, গাছের সাথে সস্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।’
নয়নতারা নার্সারির প্রোপাইটার আলতাফ হোসেন বলেন, ‘মোটামুটি সবধরনের চারা ভালোই বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে আমের চারা বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
দেশি–বিদেশি ফলের চারা ও বড় গাছের বিপুল সমারোহ দেখা গেল বিভিন্ন নার্সারিতে। সফেদা, ডেউয়া, লটকন, জলপাই, লেবু, জাম্বুরা, আতা, গাব, কাজুবাদাম, করমচা, জামরুল, আমলকী, আঙুর, অড়বড়ই, কাউফলসহ বিভিন্ন দেশি ফলের চারা ও বড় গাছ আছে। বিদেশি ফলের মধ্যে আছে অ্যাভোকাডো, পার্সিমন, রাম্বুটান, লঙ্গান, ডুরিয়ান, প্রভৃতি। শ্রীলঙ্কান, ভিয়েতনামি, কেরালাসহ নানা ধরণের নারকেলের চারা বিক্রি করতে দেখা গেল কিছু স্টলে।
মেলার দর্শনার্থী আফজাল হোসেন বলেন, ‘ এবারের গাছের মূল্য মোটামুটি সাধ্যের মধ্যে আছে।’
মেলায় অনেক রকম মসলার চারা এলাচি, চুইঝাল, গোলমরিচ, দারুচিনি, তেজপাতা এসবের চারা পাওয়া যাচ্ছে। গ্রীণ গ্লোব নার্সারির বিক্রেতা জানালেন, চুইঝাল গাছে কোনো ফুল হয় না, এটি সবাইকে জানতে হবে।
ফুলের কথা আলাদা করেই বলতে হবে। গোলাপ, জবা, জুঁই, চামেলি, বেলি, হাসনাহেনা, টগর, রঙ্গন,বাগান-বিলাস,করবী, কাঠগোলাপ, মাধবীলতাসহ কত রঙের ফুল যে আছে মেলায় তার ইয়ত্তা নেই! রঙে রূপে সুশোভন করে তুলেছে তারা দৃশ্যপট। মেলায় তাদের সান্নিধ্যে এলে ঘুচে যাবে মনের মলিনতা।
নারী দর্শনার্থী পারভীন আক্তার বলেন, আমি গাছের পাগল, সকালে ঘুম থেকে উঠে গাছের পরিচর্যা করি, গাছ দেখি। জানা অজানা নানান চারাগাছ ক্রয় করেছি আজ।
ম্যানগ্রোভ সিলভিকালচার বিভাগে সুন্দরবনের স্টলে শোভাপাচ্ছে সুন্দরী, খলসী, কাকড়া, গর্জন, ধুন্দুল, পশুরসহ নানান গাছ। তাছাড়াও বাঘের খলি এবং নানান রকমের মাছ যেগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত রয়েছে সেগুলোর তথ্য জানানোর জন্য লিফলেটের ব্যাবস্থাও রয়েছে।