একসময় গ্রামবাংলার জীবনের অপরিহার্য অংশ ছিল কামার শিল্প। লোহা পিটিয়ে দা, বটি, কুড়াল, ছুরি, হাসুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৃষি ও গৃহস্থালির সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত থাকতেন কামাররা। আগুন জ্বালিয়ে হাতুড়ির শব্দে মুখর থাকত কামারশালা। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন বিরল। আধুনিক প্রযুক্তি, বিদেশি পণ্যের আগ্রাসন এবং তরুণ প্রজন্মের অনাগ্রহে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী পেশা।
বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের অনেক কামারশালার চুল্লি নিভে গেছে। একসময় যেসব কামার পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই শিল্পে যুক্ত ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। কেউ হয়েছে রিকশাচালক, কেউ দিনমজুর, কেউবা শহরমুখী হয়ে গেছে জীবিকার তাগিদে।
কামাররা বলেন, আগে বর্ষা মৌসুমে কৃষকরা নতুন দা-বটি বানাতে আসতেন, মাঠের কাজ শুরু হলে কাজের চাপ বেড়ে যেত। কিন্তু এখন প্লাস্টিক, স্টিল ও চায়না পণ্যের সহজলভ্যতায় হাতের তৈরি লোহার সরঞ্জামের চাহিদা দ্রুত কমে গেছে। ফলে আয় কমে যাওয়ায় এই পেশা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এখনো কিছু কামার নিজের শখ ও ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদে পেশাটি ধরে রেখেছেন। তারা মনে করেন, সরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ থাকলে এই শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। লোহা পুনর্ব্যবহার, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ ও বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে কামার শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।
বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী লৌহশিল্প শুধু জীবিকার উৎস নয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও প্রতীক। তাই সমাজের সকলের দায়িত্ব এই প্রাচীন শিল্পকে টিকিয়ে রাখা-যাতে আগামী প্রজন্ম জানে, তাদের পূর্বপুরুষেরা কীভাবে ঘামের বিনিময়ে গড়ে তুলেছিলেন কৃষিভিত্তিক বাংলার শক্ত ভিত্তি।