দেশের চাহিদা মিটিয়ে পাবনার উৎপাদিত এখন বিশ্বের ২৫ টি দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। শুঁটকি মাছ উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অঞ্চলের শুটকি উৎপাদনকারীদের। পাশাপাশি এ জেলার অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে শুটকি উৎপাদন । বিশেষ করে চলনবিল, গাজনার বিল, ঘুঘুদহ বিলসহ অন্যান্য বিল ও নদ-নদী থেকে দেশি মাছের ওপর ভিত্তি করে এই শিল্প গড়ে উঠেছে।
জানা যায়, পাবনা জেলার সাথিয়া বেড়া সুজানগর চাটমোহর এবং ফরিদপুরে উপজেলাশ শুঁটকি উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই অঞ্চলগুলোয় বিল ও নদীর পাড়ে শুঁটকির অস্থায়ী চাতাল বা খোলা গড়ে ওঠেছে। শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের মূল মৌসুম হলো নভেম্বর ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত তখন বর্ষার শেষে বিলের পানি কমে যায় এবং মাছ শুকানোর জন্য পর্যাপ্ত সূর্যের তাপ পাওয়া যায়।
স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলেরা বিল ও নদ-নদী থেকে পুঁটি, খলসে, টেংরা, টাকি, চিংড়ি, শোল, বাইম, বোয়াল, বাতাসী, কই, মাগুর ইত্যাদি দেশি প্রজাতির ছোট মাছ ধরে সংগৃহীত মাছের ভেতরের বর্জ্য ফেলে পরিষ্কার করে জাল দিয়ে মাছ ভালো ভাবে ধুয়ে এরপর বাঁশের তৈরি মাচাং বা চাটাই চাতাল অথবা খোলার ওপর মাছগুলোকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে কড়া রোদে শুকানো হয় । রোদে শুকিয়ে সেই শুটকি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
শুঁটকি ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, চলন বিলের মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে শুঁটকি তৈরি করে সৈয়দপুর, ভাঙা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনরকম প্রণোদনা না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিপক কুমার পাল কে বলেন, এবছর জেলায় শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫০ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যেই ৩০ জন শুটকি ব্যবসায়ীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তবে কোন প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই।
পাবনার শুঁটকির গুণগতমান মান ভালো হওয়ায় এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাবনার শুটকি বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ভারত মধ্যেপ্রাচ্য মালয়েশিয়া সৌদি আরব কাতার ওমান সংযুক্ত আরব আমিরাত দুবাই সহ প্রায় ২৫টির অধিক দেশে রপ্তানি হচ্ছে এই শুটকি মাছ। মূলত এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের কাছে এর কদর বেশি। শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা থাকায় এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকারি ঋণ সহায়তা পেলে এর উৎপাদন ও রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব। এটি একটি অর্থনৈতিক লাভজনকের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে । তবে চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালের মাধ্যমে খাল-বিল থেকে দেশীয় মাছ শিকারের কারণে মাছের অভাবে শুটকি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা পূরণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই শুঁটকি শিল্পে সাঁথিয়া, সুজানগর ও চলনবিল এলাকায় সহস্রাধিক পরিবার জড়িত। নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা দিন হাজিরায় চাতালে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই শিল্পে সরকারি কোন নজরদারি না থাকায় মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উন্নত ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। নদ-নদীতে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কাঁচামালের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। অনেক সময় উৎপাদন খরচ অনুযায়ী বাজার মূল্য না পাওয়ায় লোকসানের ঝুঁকি থেকে যায়।
পাবনার শুঁটকি স্থানীয় অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।