চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায় সার বিতরণে তীব্র বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে কৃষকরা তাদের প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ডিলারদের সিন্ডিকেট এবং প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারীর অভাবই এই সংকটের মূল কারণ।
কৃষকদের দাবি, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। কৃষকরা তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সার কেনার যে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় কৃষক মো: জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, "কৃষকরা বেশি সার কিনে বেশি ব্যবহার করছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা শুধু প্রয়োজন মতোই সার ব্যবহার করি। এমনিতেই ডিলাররা বেশি দাম দাবী করে। আমাদের পক্ষে এই দামেই সার কিনা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বেশি সার কেমনে নিবো।"
আরেকজন কৃষক প্রশ্ন তোলেন, "ক্ষেতের জন্যি যতটুকু দরকার ততটুকুই পাইনা। বেশি পাবো কোত্থেকে। উনারা বলেন মাছ চাষীরা নাকি সার বেশি নিয়া যায়। মাছরে বেশি খাওয়ায়ে মাছ মারবো নাকি। এইগুলা সব বানানি কথা।"
কৃষকদের মতে, একটি অসাধু মহল তাদের উপর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে এবং ডিলাররা এই পরিস্থিতির অসৎ সুবিধা নিচ্ছেন। পরিস্থিতি এমন যে মাঠকর্মীরাও হুমকি ও চাপের মুখে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অন্যদিকে, স্থানীয় ডিলার এবং সচেতন মহল এই সংকটের জন্য টিএসপি ও ডিএপি সারের কম বরাদ্দ থাকাকে আংশিকভাবে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, তামাক ও মাছ চাষে সারের অতিরিক্ত ব্যবহারও সংকট বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই অভিযোগের সপক্ষে সম্প্রতি একটি ঘটনা সামনে এসেছে। গত রোববার, ৯ নভেম্বর, চুয়াডাঙ্গা সদর কৃষি অফিস থেকে বৈধ কাগজপত্রবিহীন ৪০০ বস্তা ইউরিয়া সার জব্দ করা হয়। অবৈধভাবে ব্যবসায়ীরা এই সার গুদামে নিয়ে যাচ্ছিলেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার জানান জেলায় সারের কোনো সংকট নেই এবং ডিলারদের পর্যাপ্ত সার বরাদ্দ করা হচ্ছে। তবে, তারা স্বীকার করেন যে, "কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতা সারের বাজারে এই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করছে, যাতে বেশি দামে বিক্রি করতে পারে।"
তিনি আরো জানান, "যারা সারের বাজারে কারসাজি বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"
কৃষকরা দাবি করছেন, প্রশাসন যেন অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। যাতে সিন্ডিকেটদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং প্রকৃত কৃষকরা সময়মতো ও ন্যায্যমূল্যে সার পান।