দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে বইছে শীতের হিমেল হাওয়া। শীতের আমেজ এখনও তেমন না থাকলেও শেষ রাতের শীতল আবহাওয়া গায়ে কাঁথা বা চাদর জড়াতে বাধ্য করছে। একইসাথে বাড়ছে গরম কাপড়ের চাহিদা। চট্টগ্রামে বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটের শো-রুম থেকে ফুটপাত পর্যন্ত সবখানেই এখন শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা।
তবে অভিজাত মার্কেটের শো-রুমগুলোতে এখনও তেমন বেচাবিক্রি চোখে না পড়লেও ফুটপাতে জমজমাট শীতের কাপড়ের বেচাকেনা। বিকাল থেকে রাত অবধি বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমজমাট হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, পাইকারি বাজারগুলোর বাইরে চট্টগ্রাম নগরে ১৫টি অভিজাত ও ৫৮টি সাধারণ বিপণিকেন্দ্র রয়েছে। শীতকে কেন্দ্র করে এসব মার্কেটের ২০ হাজারের বেশি দোকানে শীতের পোশাক, জুতা ও মোজা বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়া নগরের নিউমার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আমতল, টেরিবাজার, আন্দরকিল্লা, লালদীঘি পাড়, কোতোয়ালি মোড়, জিপিওর সামনের সড়ক, চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন মোড়, চাক্তাই, রাজাখালী, আগ্রাবাদ, বড়পুল, সাগরিকা, অলংকার মোড়, জিইসি মোড়, স্টিল মিল বাজার, বন্দরটিলা, ইপিজেডসহ বিপণি কেন্দ্রগুলোর সামনে হকাররা নানা রকমের শীতের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ফুটপাতে ছোটদের বিভিন্ন সাইজের গরম কাপড়, বয়স্কদের সোয়েটার, কোট, ব্লেজার, মাফলারসহ বিভিন্ন আইটেমের শীতের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। হকাররা অনেকে ৩০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা হাঁকডাক করে এসব কাপড় বিক্রি করছেন।
হকার্স মার্কেটের সামনের ফুটপাতে শীতের পোশাক বিক্রি করেন আলমগীর। তিনি বলেন, দেশে শীত ইতোমধ্যে চলে এসছে, যার ফলে কয়েকদিন ধরে শীতের পোশাক বিক্রি বেড়েছে। কম দামে জ্যাকেট, সোয়েটার ও বিভিন্ন ধরনের কম্বল কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
ফুটপাত থেকে পরিবারের জন্য শীতের পোশাক কিনছিলেন দিনমজুর মো. শাকিল। তিনি বলেন, আমরা দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ, শীতের বস্ত্র কি জানি না। রাতে প্রচুর শীত লাগে। তাই এখান থেকে কম দামে কিছু গরম কাপড় কিনলাম।
ব্যবসায়ীদের জানান, মার্কেটে চীনা তৈরি ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। এছাড়া চামড়ার তৈরি জ্যাকেট ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে চীনা কম্বল আকার ভেদে এক হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় শাল ও চাদর বিক্রি করছেন ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। বিদেশি ভালো মানের শাল চাদরের দাম পড়ছে ৫০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। ভালো মানের সুয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় এবং উলের তৈরি সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকায়।
নগরীর কয়েকটি মার্কেটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মধ্যবিত্তদের মার্কেট নামে খ্যাত জহুর হকার্স মার্কেটে শীতের কাপড়ে জমজমাট বিকিকিনি চলছে। একই অবস্থা দেখা গেছে, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকুমণ্ডি লেইনেও। হকার্স মার্কেটে দেখা যায়, মেয়েদের সোয়েটার ও জ্যাকেটের দাম মানভেদে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা, ছেলেদের সোয়েটার ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, ছেলেদের জ্যাকেট ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকা, ছোটদের সোয়েটার ৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মাফলার ৪০ থেকে ২০০ টাকা এবং গরম টুপি ৫০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
হাকার্স মার্কেটের ম্যান্স মার্টের মালিক অনীস জানান, প্রতি বছরের মতো এবছরও নিত্য নতুন ডিজাইনের শীতের কাপড় এসেছে। গত বছর শীতের কাপড়ের তেমন ব্যবসা হয়নি। এবার আশা করছি ভালো বিক্রি হবে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসা ক্রেতা জুয়ী আক্তার বলেন, আমি এসেছি সাতকানিয়া থেকে। শহর এলাকায় তেমন শীত অনুভুব না হলেও গ্রামে তো শীত শুরু হয়েছে। তাই নিজের জন্য ও বাচ্চাদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছি। তবে এবার গত বছরের তুলনায় দাম একটু বেশি। দাম বেশি হলেও কিনতে তো হবে।
এদিকে শীতের পোশাকের পাশাপাশি জমে উঠেছে কম্বলের বাজারও।আসন্ন শীতকে সামনে রেখে লেপ-তোশকের দোকানে কারিগরেরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা নতুন-পুরনো কম্বলও।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি কম্বল বিক্রেতা জান্নাত স্টোরের সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন ব্রান্ডের কম্বল ৪৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পুরোনো কম্বল মিলছে ২০০ থেকে হাজার টাকায়।
তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের মার্কেটে পাইকারি ও খুচরা দুইভাবে বিক্রি হয়। বর্তমানে পাইকারি বিক্রির চাপ বেশি। তবে খুচরায় এখনো সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না। শীতের প্রকোপ আরও বাড়লে বিক্রি পুরোদমে শুরু হবে।
এদিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীরা সারা বছরই যুক্ত থাকেন ভোগ্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসার সাথে। তবে শীতকাল এলেই এখানকার আমিন মার্কেটের ৫০ থেকে ৬০টি দোকানের ব্যবসায়ীরা আমদানি করেন পুরনো শীতের কাপড়। মূলত কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, ট্রাউজার, ব্ল্যাজার এবং লং কোটই বেশি থাকে। বিদেশিরা একবার পরেই অনেক কাপড় ফেলে দেন। সেগুলো আমাদের দেশে আমদানি করা হয়। তবে নামে পুরনো কাপড় হলেও অনেক দেখতে নতুনের মতোই লাগে। আমদানি খরচ কম হওয়ায় ক্রেতারাও কম দামে সেইসব কিনতে পারেন। পাইকারি বাজার থেকে এসব পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করে ভ্রাম্যমাণ হকাররা বিভিন্ন অলিগলিতে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী জেলা এবং উপজেলা থেকেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এসব কাপড় কিনতে ছুটে আসেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, বন্দর দিয়ে তাইওয়ান, কোরিয়া, জাপান প্রভৃতি থেকে নিয়ে আসা হয় পুরাতন কাপড়ের গাঁট। নগরীর হকার্স মার্কেটসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আমদানিকৃত গাঁট কিনে নিয়ে যায়। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করে এসব কাপড় আনা হয়।
খাতুনগঞ্জের পুরাতন পোশাকের আড়তদার মেসার্স হাসেম অ্যান্ড ব্রাদাসের্র নূরদ্দীন বলেন, পুরনো কাপড়ের আমদানি করতে প্রায় ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। কাপড় আমদানি করে সেগুলো আবার ভালো খারাপ বাছাই করতে হয়। কারণ সব কাপড় ভালো থাকে না। এরপর আমরা কুরিয়ারের মাধ্যমে সারাদেশে বিক্রি করি। সারাদেশের খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়।
খাতুনগঞ্জ আমিন মার্কেটের মেসার্স ফারুক অ্যান্ড ব্রাদার্স এর স্বত্বাধিকারী কাজী জাকির হোসেন আনিছ জানান, সব অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা কাপড় কিনতে আসেন। কেউ আসতে না পারলে মোবাইলে অর্ডার দেন। রাস্তাঘাট ভালো হওয়ায় পণ্য পরিবহনে সুবিধা হয়েছে।