নেত্রকোনায় সরকারের ঘোষণার প্রথম দিন থেকে রোস্টার পালন না করে লোডশেডিং করায় সব নমুনায় ওলটপালট হয়ে গেছে। প্রতি ঘণ্টার পরই ঘণ্টাব্যাপী লোডশেডিং করা হয়েছে। মানা হয়নি কোন বিধিবিধান। অবস্থাদৃষ্টে যখনই মনে হচ্ছে তখনই করা হচ্ছে লোডশেডিং। এ কারণে প্রায় এলাকাতেই দিনরাত থাকে তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে।
ছুটির দিনেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। যখন সব জায়গায় তাপদাহে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে ঠিক তখনই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪-১৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করছে। এতে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির হিসাব গুনতে হচ্ছে নেত্রকোনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিকদের। শুক্রবারও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে পুরো নেত্রকোনা জেলা। বিদ্যুৎ বিভাগের জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে তা বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই।
জেলা সদর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন, কেন্দুয়া, আটপাড়া, পূর্বধলা, কলমাকান্দা ও দূর্গাপুর উপজেলায় রয়েছে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৬ লক্ষাধিক এবং জেলা শহর মুক্তারপাড়া,নাগড়া,কুরপাড়, ছোট বাজার,তেরীবাজার,বড় বাজার,সাতপাই এলাকাতে রয়েছে পিডিবির কয়েক হাজার গ্রাহক।
সম্প্রতি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ফলে কার্যত জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাত ৮টার মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজে আসছে না। এক সময় শুধু সন্ধ্যার সময়, রাতে লোডশেডিং হলেও সম্প্রতি দিনে রাতে চলছে লোডশেডিং সমানে সমান ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে গ্রাহকরা।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, তারা জাতীয় গ্রীড থেকে চাহিদার প্রায় ৩৩ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন। তা হয়ে থাকলে ২৪ ঘণ্টায় ৮ ঘণ্টায় লোডশেডিং হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ২৪ ঘণ্টায় ১৫-১৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক বাংলার দর্পণ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এবং সমকাল পত্রিকার নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি খলিলুর রহমান শেখ ইকবাল বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যে লোডশেডিংয়ের রোস্টার দেয়া হয়েছিল সেটি সবাই মেনে নিয়ে কাজ কর্ম করতে পারতেন। কিন্তু রোস্টার না দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, দুই ঘণ্টা পর এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আধঘণ্টা পরও লোডশেডিং হচ্ছে। এই অবস্থায় তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। অপরদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।
রোস্টারের বাইরে লোডশেডিং-বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ নেত্রকোনা নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বারহাট্টা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার(ডিজিএম) মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বলেন, বারহাট্টায় বিদ্যুতের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে রোস্টার অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে তা সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু দেয়া হচ্ছে মাত্র এক তৃতীয়াংশ। এ কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলায় বিদ্যুতের যে পরিমাণ চাহিদা, তার বিপরীতে অর্ধেক পেলেও মোটামুটি চলা যেতো।
এ ছাড়া নেত্রকোনায় রোস্টার অনুযায়ী বিদ্যুতের বরাদ্ধ কম পাওয়ায় রোস্টারের বাইরেও লোডশেডিং হওয়ার কারণে ভোগান্তির অন্ত নেই। এতে করে জীবনযাত্রা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলার কয়েকটি এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক কিছু নির্ভর করে বিদ্যুতের ওপর। যে রোস্টার দেয়ার কথা ছিল সেটি মেনে প্রস্তুতি নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যেতো। কিন্তু অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারা জানান, রোস্টার অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেয়া হলে নেত্রকোনাতে অতিরিক্ত লোডশেডিং হবে না। এতে করে জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে বাসাবাড়িতে তীব্র গরমে যেমন মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন তেমনি ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন না।
নেত্রকোনার দৈনিক বাংলার নেত্র: পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নেত্রকোনা প্রতিনিধি ও যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার কামাল হোসাইন বলেন, নেত্রকোনাতে শহরের পাশাপাশি গ্রাম এলাকায় সমানতালে লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও লোডশেডিংয়ের মাত্রা সীমাহীন বেড়েছে। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন সব এলাকায় লোডশেডিংয়ের মাত্রাও সমতালে বেড়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ( জিএম) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা চাহিদার প্রায় ৩৩ ভাগ বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি। যার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে।
নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম আসায় বারবারই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানিয়েছেন, জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এরপর থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভা ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভাসহ অন্যান্য সভা ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে করা হচ্ছে।
তিনি জানান, এসব সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধাগণসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংবাদিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে অংশ নিতে হয়। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আসতে হয় অনেক দূর থেকে, এতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়। কিন্তু সভাগুলো ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে হওয়ায় সেই জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে।
-বাবু/শোভা