গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত বিল্লাল হোসেন বিলুকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল আজিজকে (৫৫) নরসিংদীর শিবপুর হতে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনিসুর রহমান স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন ।
গ্রেফতারকৃত আব্দুল আজিজ কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বাহাদুরসাদী গ্রামের মৃত আলফাজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। তিনি তৎকালে সমযে স্থানীয় খলাপাড়া এলাকার ন্যাশনাল জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। অন্যদিকে নিহত বিল্লাল হোসেন বিলু একই ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী উরফে কিতাব আলীর ছেলে। তিনিও ন্যাশনাল জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। নিহত বিলু ও আসামি আজিজ পাশাপাশি গ্রামের বাড়ীর বাসিন্দা।
ওসি জানান, র্যাব বিকেল সোয়া তিনটার দিকে আসামি আবদুল আজিজকে কালীগঞ্জ থানায় হস্তান্তরের পর বিকেলেই গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মৈশাদী এলাকায় র্যাব-১ অভিযান চালিযে আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করেন।
১৯৯৫ সালের সকালে লাউ চুরির ব্যাপারে কথা আছে বলে বিলুর বাড়ি থেকে আসামি রুস্তম আলী বিলু ও তার বাসার কর্মচারী জাকারিয়াকে ঈশ্বরপুর বাজারে নিজাম উদ্দিনের দোকানের উত্তর পার্শ্বে ডেকে নেয। এ সময় আসামি আব্দুল আজিজসহ অন্যান্য আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিলুকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ধারালো ছুরি, দা, কুড়াল ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘটনাস্থলে ওৎপেতে ছিল। ভিকটিম বিলু ও জাকারিয়ার সাথে আসামি কাদির ও তার ভাই ছাদিরের সাথে লাউ চুরির বিষয় নিয়া কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আসামি ফালান তার হাতে থাকা লোহার তৈরী কুড়াল দিয়ে ভিকটিমের মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে। এতে রক্তাক্ত জখম হয়ে ভিকটিম বিলু প্রাণের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ঈশ্বরপুর বাজারের দক্ষিণ দিকে জনৈক জোতিন্দ্র বাবুর কফি ক্ষেতের ভিতর দিয়ে সরকারি রাস্তায় উঠলে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা আসামি আঃ আজিজ, ফালান, কাদির, ছাদির, কালাম, বাজিত, ওসমান, আঃ ছামাদ, হুমায়ুন, রুস্তম আলী, মানিক, ফারুক ও আলম পিছন থেকে ধাওয়া করে বিলুকে ধরে ফেলে এবং এলোপাতারি কোপাতে থাকে। অতঃপর বিলু রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বে জোতিন্দ্র বাবুর জমিতে পড়ে যায়। এ সময় ধস্তাধস্তিতে বিলুর পরনে লুঙ্গি, চাদর ও মাফলার উক্ত স্থানে খুলে পড়ে যায়। বিলু কর্দমাক্ত, রক্তাক্ত ও উলঙ্গ অবস্থায় দৌড়ে প্রাণে বাঁচার জন্য চেষ্টা করে জনৈক ইসলাম ও ছালামের জমির মধ্যে পড়ে গেলে আসামি ফালান কুড়াল দিয়ে ভিকটিম বিলুর বুকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। ঐ সময় ধৃত আসামী আঃ আব্দুল আজিজ তার হাতে থাকা ধারালো ছোরা দিয়ে ভিকটিম বিলুকে জবাই করে হত্যা করে।
পরবর্তীতে ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর ভিকটিমের ভাই মোঃ জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় ঘটনার সাথে জড়িত আসামিসহ ফালান, কাদির, ছাদির, কালাম, বাজিত, আ. আজিজ, ওসমান, আঃ ছামাদ, হুমায়ুন, রুস্তম আলীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে (মামলা নং-০৩)।পরে মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৯৯৭ সালের ১০ মে আসামি আব্দুল আজিজসহ এজাহার নামীয় ১০ জনসহ তদন্তে প্রাপ্ত ঘটনায় জড়িত মানিক, ফারুক ও আলমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (নং-৪৪) দাখিল করেন। মামলার পর থেকে আসামি আব্দুল আজিজ আত্মগোপনে থাকায় থানা পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, প্রথম আদালত, গাজীপুর বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম বিলুকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামি আব্দুল আজিজসহ ১৩ জন আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও ১০ হাজার) টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। উক্ত ঘটনার পর হতে আসামি আব্দুল আজিজ দীর্ঘ ২৭ বছর পলাতক ছিলো। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ০৮ জন আসামি বর্তমানে জেল হাজতে আটক আছে এবং একজন আসামি জেল হাজতে মৃত্যুবরণ করে। অপর ৩ জন আসামী যথাক্রমে ফালান, আলম ও মানিক এখনো পলাতক রয়েছে।
আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় আসামি আব্দুল আজিজ ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তিনি কোনোদিন কালীগঞ্জের নিজ স্থায়ী ঠিকানায় যায়নি। এমনকি তিনি এনআইডিতে নিজের ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ ও পেশা পরিবর্তন করে কাঁচা তরকারির ব্যবসা করে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মৈশাদী গ্রামে তার শ্বশুর বাড়ীতে বসবাস শুরু করতেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামী আসছিল। গ্রেফতারকৃত আসামি আবদুল আজিজকে গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
-বাবু/ফাতেমা