রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয়ের ইইনোভেটিভ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার অপরাধ দমনে, মহানগর বাসীর প্রত্যাশাপূরণে ও সাংবাদিক ভাইদের প্রাণের দাবীর প্রেক্ষাপটে এই ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়। সর্বপ্রথম একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে মোট ৬ জন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সদস্য নিয়ে এই ইউনিট যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে আরও কিছু প্রশিক্ষিত সদস্য যুক্ত হয়ে বর্তমানে ১ জন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ৪ জন এস আই, ৩ জন এ এস আই এবং ১৬ জন কনস্টেবলসহ সর্বমোট ২৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও চৌকস টিম এই ইউনিটে কাজ করছে।
সরাসরি অপারেশনাল টিম হিসেবে ফিল্ডে কাজ না করলেও এই ইউনিট রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল কার্যক্রমে বিশেষ করে সাইবার অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণসহ আসামি গ্রেফতারে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার সকল ক্লু-বিহিন ঘটনা উদঘাটন, অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেফতার সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও পার্শবর্তী অন্যান্য জেলার সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত ঘটনার চাহিত তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রেরণ করা হচ্ছে।
মূলত সাইবার অপরাধ বলতে কি বোঝায়? এক কথায় কোন ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে সংঘটিত অপরাধ ই সাইবার অপরাধ। গত ২ বছরে রাজশাহী মেট্রোপলিটনসহ পার্শবর্তী এলাকার মধ্যে প্রায় ৮৬১ টির মত ফেইসবুক সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে। ফেইসবুক সংক্রান্ত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নারীদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ছবি/ভিডিও সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করা, ফেইসবুকে যে কারো ছবি দিয়ে ভুয়া একাউন্ট তৈরি করা, সোসাল মিডিয়ায় বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছেড়ে দিয়ে মানহানি করা, ফেইসবুক একাউন্ট হ্যাকড করা, বিভিন্ন ভুয়া মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পর্ণ ছবি ও ভিডিও পাঠানোসহ ফেইসবুকের মাধ্যমে সংঘটিত সকল অপরাধ।পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো কিন্তু বর্তমানে নেই তাই সাবেক প্রেমিক/প্রেমিকাকে হেনস্থা বা ব্লাকমেইল করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন ছবি/ ভিডিও প্রচার করা। ফেইসবুক সংক্রান্ত প্রায় ৮৬১ টি অপরাধের মধ্যে ৮৪০ টির মত নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি'র সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ও আর্থিক ট্রান্সজেকশন/ ট্রান্সফার সিস্টেমের অপরাধ। বিভিন্ন ভুয়া অফারের মাধ্যমে পিনকোড নিয়ে বিকাশ একাউন্ট হ্যাকড, ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের বিকাশ, নগদ ও রকেট চক্রের পরিকল্পনামাফিক ফাঁদ সহ অন্যান্য অপরাধ। গত ২ বছরে এই সংক্রান্ত প্রায় ৩৫৭ টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ইমো/হোয়াটসঅ্যাপ/ই-মেইল সংক্রান্ত প্রায় ৫৮ টি'র অধিক অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত অপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইমো/হোয়াটসঅ্যাপ/ই-মেইল ব্যবহার করে সম্পর্ক স্থাপন ও আর্থিক প্রতারণার মত ঘটনা। এছাড়াও রয়েছে ই-মেইল হ্যাকড করে বিভিন্ন অপ্রতিকর তথ্য পাঠানো ও ভুয়া বা বেনামে মেইল আইডি খুলে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা।
টিকটক/লাইকি সংক্রান্ত মোট ১৫ টি অভিযোগ এসেছে এবং সবগুলোরই শনাক্ত পূর্বক নিষ্পত্তি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো বিভিন্ন উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করা। গত ২ বছরে এই ইউনিট প্রায় ১৫৩ টির মত অপহরণের অভিযোগ সংক্রান্তে ১৩৯ ভিক্টিম উদ্ধারসহ আসামি শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো অপ্রাপ্ত/অল্পবয়সী মেয়ে/ছেলেদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অপহরণ করা, বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে অপহরণ করা।
গত দুই বছরে অনেক হারানো বা চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারের তথ্য উদঘাটনের সফলতা রয়েছে এই ইউনিটের। গত ২ বছরে প্রায় ২৬০৭ টি বিভিন্ন মোবাইল/ল্যাপটপ উদ্ধার করার তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এই ইউনিট উপরোক্ত বিভিন্ন অপরাধ ছাড়াও মেট্রোপলিটন এলাকার অন্যান্য ক্লু-বিহীন ঘটনা ও সংঘবদ্ধ অপরাধ ও অপরাধী শনাক্ত পূর্বক গ্রেফতারে প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। গত ২ বছরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধসহ সর্বমোট প্রায় ৪৪৩৬ টির মত অভিযোগ/জিডি এসেছে এরমধ্যে প্রায় ৪১৬৯ টির মত অপরাধ/জিডি/অভিযোগ এর নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি'র নব্য গঠিত সাইবার ক্রাইম ইউনিট যেখানে সফলতার হার প্রায় ৯৪ শতাংশ।
আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট বাংলাদেশের সকল ইউনিটের মধ্যে সর্বপ্রথম কিশোরদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে। যেখানে রাজশাহী মহানগর এলাকার প্রায় ৫১৫ জন কিশোরের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী মহানগর এলাকার প্রায় ০৯ টির মত কিশোর গ্যাং এর বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিদিন আরএমপির প্রত্যেকটি থানার মাধ্যমে ডাটাবেজ এ সংরক্ষিত কিশোরদের তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ডাটাবেইজে সংরক্ষিত ৫১৫ কিশোরদের নিয়মিত মনিটরিং এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশিং সেবার অন্যতম বহুল তথ্য সম্বলিত "" হ্যালো আরএমপি "" এ্যাপস সাইবার ক্রাইম ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত হয়। আপনার পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন অভিযোগ ও তথ্য প্রদান করতে পারবেন। এছাড়াও এই এ্যাপস এর মাধ্যমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে পাওয়া যায়। এই এ্যাপস এর মাধ্যমে প্রাপ্ত এখন পর্যন্ত প্রায় ২৯৫ টির মত অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর এলাকার সার্বিক আইন শৃংখলা মনিটরিং, বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অপারেশন কন্ট্রোল এন্ড মনিটরিং সেন্টার (সেন্ট্রাল সিসি ক্যামেরা ইউনিট) ও পরিচালিত হয় আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট মাধ্যমে। রাজশাহী মহানগরীর প্রায় ৫০০ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন পূর্বক পুরো মহানগরীকে নজরদারিতে নিয়ে আসার মত কঠিন কাজও করে যাছে এই ইউনিট। এই ইউনিটের সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রায় ৪৭৫ টির অধিক চুরির ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও চোর শনাক্তকরণ। প্রায় ৮২ টির অধিক ছিনতাই ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধী শনাক্তকরণ, প্রায় ৬৮ টির অধিক ইভটিজিং এর ঘটনায় অপরাধী শনাক্তকরণসহ মহানগরীর কিশোর অপরাধ দমনে সার্বক্ষণিক মনিটরিং, প্রায় ৯৩ টির অধিক হারানো ঘটনার রহস্য উদঘাটন,
প্রায় ৩১ টির মত অজ্ঞান পার্টি ঘটনার আসামি শনাক্তকরণ, গত ২ বছরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার প্রায় ৫৩ টির অধিক মারামারি ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ আসামি শনাক্তকরণ, ছেলে/মেয়ে হারিয়ে যাওয়া ও হারিয়ে যাওয়ার নাটক করা সহ বিভিন্ন ব্যক্তি হারানোর প্রায় ৫৫ টি ঘটনার রহস্য উদঘাটন।
প্রায় ৭৫ টি সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ শনাক্তসহ দ্রুত সংবাদ প্রেরণ, প্রায় ২৩ টির অধিক ক্লু-লেস মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটনসহ আসামি শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। এছাড়াও ট্রাফিক কন্ট্রোল, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামের মিছিল/মিটিং/সমাবেশ/মানববন্ধন ও বিশেষ দিবসের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যেবক্ষণ ও মনিটরিং,
সর্বোপরি অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার (সেন্ট্রাল সিসি ক্যামেরা ইউনিট) এখন পর্যন্ত প্রায় ৯৫৫ টির অধিক ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনসহ আসামি শনাক্তকরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেছে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এর আওতায় ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তায় সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের, পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় অত্যাধুনিক ফরেসিক যন্ত্রপাতি/সফটওয়্যার, তথ্য-প্রযুক্তি ও দক্ষ-প্রশিক্ষিত-চৌকস জনবল নিয়ে একটি ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার জঙ্গি ও রাষ্ট্র বিরোধীদের শনাক্তসহ অন্যান্য সকল অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই ইউনিট রাজশাহী মহানগরবাসীর সেবায় সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাবু/জাহিদ