জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো প্রতিটি পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করলেও তা দেখার যেন কেউ নেই। মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের হুঁশিয়ারি কানেই নিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। মনিটরিং এবং সমন্বয়ের অভাবে সবকিছুর দাম পাগলা ঘোড়ার মতো বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বাজার ও পরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
চাল, ডাল, তেল ও ডিমসহ সব ধরনের সবজির দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা এমনকি অলি-গলির বাজার-কোথাও নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যেমন করে পারছে দাম হাকাচ্ছে। একই বাজারে একই জিনিষের বিভিন্ন দাম। ক্রেতারা অসহায় ও হতাশ। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রনালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতর ক্রেতাদের আস্বস্ত করার জন্য বিভিন্ন সময় ভিবিন্ন কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। ফলে দিন দিন টিসিবির ট্রাকের সামনের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
গত তিনমাস ধরে একটানা শুধু দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। ৫০/৬০ টাকার নীচে চাল পাওয়া যায় না। ডালের দামও প্রায় ১২০ টাকা থেকে দেড়শ’ টাকা কেজি। ডিমের ডজন ১৪৫/১৫০ টাকা। ৫০/৬০ টাকা কেজির নীচে কোনো সবজি নেই। মাছ-মাংসে তো হাত দেবারই জো নেই। বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ সারা বছর ধরেই ১৪/১৫শ’ টাকা কেজি বিক্রি হয়। ইলিশের ভরা মৌসুমেও দাম তেমন কমছে না। ছোট একটা ইলিশের দামও ৭/৮০০ টাকা। ফলে এখন মধ্যবিত্তের ভরসাস্থল চাষের মাছ ছোট পাঙ্গাস অথবা তেলাপিয়া মাছ। গরু বা খাসির মাংসের দাম আকাশ ছোঁয়া। ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি খাসির মাংস আর গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের এই পাগলা ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছেই। লাগাম পরানো যাচ্ছে না। এর পদতলে প্রতিনিয়তই পিষ্ট হচ্ছে জনজীবন। ব্যয় বাড়ার কারণে অন্যান্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবকিছুর দামই আকাশছোঁয়া। অথচ বাজারে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। রাজধানী ঢাকা থেকে নিভৃত গ্রাম পর্যন্ত থরে থরে সাজানো সব পণ্য। কিনতে গেলে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায় সব সবজির দামই স্বাভাবিকের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেশি। পেঁপে, করলা, বরবটি, ঢেঁড়শের মতো সবজিগুলো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। শীতকালীন সবজি এখনো বাজারে আসেনি। তাই গুনতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দাম। সরকার নির্ধারণ করে দেয়ার পরও আলু গতকাল শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তে দাম না কমার কারণে তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এবং বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশিতে।
করোনা মহামারীর কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-আয়ের মানুষের আয় কমে গেছে। তার ওপর প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতেই হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষ। কারো কারো জন্য পরিস্থিতি এতটাই করুণ যে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ন্যূনতম চাল, আলু, ভোজ্যতেল, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজও যেন আজ বিলাসবহুল পণ্যের কাতারে। মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটার বোতলের দাম ছিল ৪৯৫ থেকে ৫০৫ টাকার মধ্যে। এখন বিভিন্ন বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫১৫ থেকে ৫৩০ টাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর আমন মৌসুমে ৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। তা অর্জিত হয়েছে। নভেম্বরের শেষ দিকে নতুন মৌসুমের চাল বাজারে আসতে শুরু করতে পারে। অবশ্য দাম কমা নির্ভর করছে আমনের ফলনের ওপর।