মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫ ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫
এসএসসি পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁস
রক্ষক যখন ভক্ষক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৩৮ PM
স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব থাকে প্রধান শিক্ষকের ওপর, এই কথা আর কে না জানেন। স্কুলের অভিভাবক হিসেবে নিয়মানুবর্তিতা, পড়াশুনোর মানোন্নয়ন, পড়ুয়া ও শিক্ষকদের অভাব অভিযোগ রক্ষার যাবতীয় দায়িত্ব প্রধান শিক্ষককেরই। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে উঠেন। আর সেই শিক্ষকই যদি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মতো মারাত্মক অপরাধ করে থাকেন, তবে সেই স্কুল তথা পড়ুয়াদের ভবিষ্যত বিপদের মুখে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। অনেকের মনে হতেই পারে, শিক্ষক অন্তত এই রকম গর্হিত কাজ করবেন না। তবে শিক্ষক হয়ে যখন এ রকম ঘৃণ্য বা অপরাধমূলক কাজ করেন, তখন তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। একজন শিক্ষক কেবল মেধাবী ও উচ্চ ডিগ্রিধারী হবেন না; তার নৈতিক মান ও নীতিবোধও উঁচু হওয়া উচিত।

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার একটি স্কুল থেকে চলতি বছর অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষার চারটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র উদ্ধারের পর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড সেই পরীক্ষাগুলো স্থগিত ঘোষণা করেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রশ্নপত্রগুলো উদ্ধার করেন। তারপর রাতে এ ব্যাপারে ভুরুঙ্গামারী থানায় মামলা করা হয়। রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, ইংরেজির শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক জুবায়ের হোসাইনকে। এরপর গত বুধবার সকালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইমলাম চারটি পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশের তথ্য জানান। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান বলেন, “প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পরামর্শে মামলা হয়েছে। স্থগিত করা গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান ও রসায়ন এই চারটি বিষয়ের পরীক্ষার রুটিন শিগগির জানিয়ে দেওয়া হবে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। ইংরেজি প্রথম এবং গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে আলোচনা হয়। অভিযোগ আসে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকেও। স্থানীয় সাংবাদিকরাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন। পরে উপজেলা প্রশাসনও এ নিয়ে নজরদারি শুরু করে। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন একপর্যায়ে নিশ্চিত হয়, অনুষ্ঠিত কোনো বিষয়ের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের মধ্যে করেই সামনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরানো হয়েছে। তারপরই ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মা, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোর্শেদুল হাসান, ভুরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের কক্ষে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে তখন চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার গণিত, কৃষি বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের প্রশ্নপত্র উদ্ধার করা হয়; যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা এখনও হয়নি।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “পরীক্ষার এ কার্যক্রমে পুলিশের নিরাপত্তা দেওয়া ছাড়া অন্য কাজ নেই। আমরা সেটি নিশ্চিত করেছি। প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা জালিয়াতির ঘটনা ঘটালে তার দায় পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার সংশ্লিষ্টদের।’ তিনি আরও বলেন, “মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। মূলহোতাকেও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আমি নিজে বিষয়টি মনিটরিং করছি।”

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত