মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে কক্সবাজার টেকনাফে উপজেলার একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের মোট ৫২৩ জন ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে ঘর বিতরণ করা হয়। মাথাগোঁজার স্থায়ী একটি আবাসন পেয়ে নতুন জীবন শুরু করেন এসব ভূমিহীন অসহায় মানুষ।
এসব আশ্রয়ণের ঘর মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। দুর্নীতি ও প্রভাব খাটিয়ে ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত অনেকেই সচ্ছল। তাদের অনেকেই এসব ঘরে বসবাস না করে ভাড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে অসহায় মানুষ সরকারি এসব ঘরপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা মেলে। টেকনাফে আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নিজেকে ভূমি ও গৃহহীন দাবি করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিলেও তা দিয়ে এখন ব্যবসা করছেন উপকারভোগীরা। এমন অভিযোগ উঠেছে কামালসহ ৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নে নয়া পাড়ার শেষ মাথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকায় ৫ নম্বর সিরিয়ালে রয়েছে নয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ কামালের ঘর। যার ওই গ্রামেই টিনশেড ঘর রয়েছে। তবু তিনি ঘর পেয়েছেন। কামালের নিজের ঘর থাকায় এখন সেখানে থাকে আরেকজন।
আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কামাল হোসেন নিজের নামে বরাদ্দ ঘরে কখনো বসবাস করেননি।কামালসহ ৭ টি ঘর তারা মাসে ভাড়া দিয়ে থাকে। কামাল ২ লাখ টাকার বিনিময়ে ঘরটি বিক্রি করে রাশেদা নামের এক মহিলাকে।পরে জানাজানি হলে টাকা ফেরত দিয়ে দিছে বলে জানান বসবাসকারী।
টেকনাফ সাবরাং নয়া পাড়ার( পুরান পাড়ার) আশ্রয়ণ ঘরে থাকা এক মহিলা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানান,আমাদের ১০ টি ঘরের মধ্যে তিনটি ঘরে উপকারভোগী বসবাস করে। বাকি ৭ টি ঘরে কেউ থাকে না।৫ নং ঘর বিক্রি করলেও টাকা ফেরত করছে আর ১ নং ঘর সাইফুল ইসলাম ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছিল। এখন সেই টাকা ফেরত দিছে কিনা তা আমি জানি না।কেউ কেউ নিজের নামে বরাদ্দ ঘরটি দীর্ঘদিন তাদের আত্মীয়দের কাছে ভাড়া দিয়েছিল। বর্তমানে সেই ৭টি ঘরে তালা ঝুলিয়ে রাখলেও তারা নতুন ভাড়াটিয়া খোঁজ করছেন বলে জানান এ মহিলা।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে কামাল এবং সাইফুল ফোনে বলেন,আমরা এখন ঘর বিক্রি করব না এবং ভাড়া ও দিব না। বিক্রি করছিল আগে সেটা স্বীকার করে তারা দুজন।আর পাঁচটি বাড়ি ভাড়া চলে। আমাদের ঘর তালাবদ্ধ করে রাখছি। নিউজ না করতে অনুরোধ করে তারা দুজন।
জানতে চাইলে স্থানীয় অনেকে জানান, তারা এখানে থাকেন না, থাকেন নিজস্ব বাড়িতে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের তালিকা সঠিকভাবে প্রস্তুত না করার কারণে এ সমস্যা হয়েছে। যারা তালিকা প্রস্তুত করেছেন তারা প্রকৃত ভূমিহীনদের নাম না দিয়ে তাদের পছন্দের লোকদের নাম দিয়েছেন।সঠিক যাচাই-বাছাই না করে প্রকৃত উপকারভোগীদের আশ্রয়ণে ঘর না দেওয়ায় সরকারি ঘর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মুফিত কামাল ও ফেরুজা বেগম জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে সরকার টিনের গুচ্ছগ্রাম দিয়েছিলেন। তাদের প্রতিটি ঘরেই মানুষ থাকে। বর্তমানে ওইসব ঘর জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। তাদের পাশেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর রয়েছে। অথচ অনেকে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকছেন না। সবময় তালাবদ্ধ থাকে। আর যারা বসবাস করেন সিংহভাগই অন্যের বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকেন। অনেকে উপহারের ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার অনেকে ভাড়া দিয়েছেন। যেসব উপহারের ঘর তালাবদ্ধ থাকে, সেগুলো যেন গুচ্ছগ্রামে জরাজীর্ণ ঘরে থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া ছাত্র মোঃ শাহ্ আলম বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সিংহভাগ ঘরে বরাদ্দ পাওয়া উপকারভোগীরা থাকেন না টেকনাফে যেখানে এসব ঘর দিয়েছেন শুধু সাবরাং না সব খানেই এরকম অভিযোগ। যাদের কাছে ঘরের প্রয়োজন নেই তারাই এসব ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাছের লোক এবং আত্মীয়দের ঘর দিয়েছেন।তাই সিংহভাগ ঘর তালাবদ্ধ থাকছে বলে অভিযোগ তার।প্রশাসনের কাউকে কোনোদিন আশ্রয়ণ প্রকল্পে এসব ঘর তদারকি করতেও দেখেননি।বরাদ্দ পাওয়া যেসব ঘরে প্রকৃত মালিকরা থাকেন না, সেগুলো ফেরত নিয়ে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে বণ্টন করার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, যদি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর কেউ বিক্রি করে থাকলে এবং ভাড়া দিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই করে তাদের ঘর বাতিল করা হবে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আদনান চৌধুরী নিজের নামের বরাদ্দ ঘর ভাড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে আর ভাড়াটিয়ার বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখতেছি ।বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।