শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫ ১৩ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫
রাইড শেয়ারের ছদ্মবেশে অপহরণকারী, তরুণীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ অতপর...
শান্তর মূল টার্গেট আবাসিক হোটেল থেকে বের হওয়া অল্প বয়সী কিশোরী ও তরুণী
প্রকাশ: বুধবার, ২২ মে, ২০২৪, ১:১৪ PM আপডেট: ২২.০৫.২০২৪ ১:২৭ PM
রাইড শেয়ার উবারের গাড়ি চালকের ছদ্মবেশে একদল অপহরণকারী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। সড়কে কোনো কিশোরী কিংবা তরুণীকে একাকী হাঁটতে দেখলেই পথরোধ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর অস্ত্রের মুখে চলে গণধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায়।

সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার রিং রোডের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রিকশা যোগে ফেরার পথে এক কিশোরীকে পথরোধ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাইভেটকার গাড়িতে তুলে নিয়ে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায় করে সংঘবদ্ধ অপহরণ ও ধর্ষণকারী চক্রের সদস্যরা। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় অপহরণ, ধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী কিশোরী তুলি আক্তার (ছদ্মনাম)। বয়স ১৪ বছর। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড এলাকায় বসবাস করে। স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তুলি গত ১১ মে সকালে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়। এরপর শ্যামলী পার্কে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে। সেখান থেকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলো। রিকশাটি মোহাম্মদপুরে থানার রিং রোডের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আসামাত্রই এক ব্যক্তি তার গতিরোধ করে। এরপর জোর করে রিকশা থেকে একটি প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরিয়ে কিশোরীর বাসার এলাকার একটি নির্জন সড়কে নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গণধর্ষণ করে। এরপর কিশোরীকে বাসার সামনে নামিয়ে দেয় অপহরণকারীরা। এরআগে তুলিকে অপহরণ ও ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে মা ও বন্ধুর কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করে তারা। এই ঘটনায় ১৪ই মে তুলির মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেন।


চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় মামলার পরপরই জড়িতদের ধরতে তদন্তে নামে থানা পুলিশ। ঘটনাস্থল ও আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শনাক্ত করা হয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে। পরবর্তীতে গত ১৮ মে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মূলহোতা নাজমুল হাসান শান্ত (৩০) ও শহীদ মিয়া (৪৮)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মিজানুর রহমান বলেন, রাস্তা থেকে কিশোরীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপহরণ, পরবর্তীতে ধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় নাজমুল হাসান শান্ত (৩০) ও শহীদ মিয়া (৪৮) নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি। গাড়িটির মালিক একজন অ্যাডভোকেট। তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে গাড়িটি চালাতো শান্ত।

তিনি আরও বলেন, শান্তর নেতৃত্বে এই সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় অপহরণ করে গণধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছিলো। গত এক বছরে শান্তর মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে প্রায় ১৪ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, একই ধরনের অপরাধে ভুক্তভোগীদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা এই বিকাশে আনা হত। তবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সিম ঘটনার পর তারা ফেলে দিতো।

মামলাটি তদন্ত করছেন মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক অনিক ভক্ত। চক্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার তিনদিন পর ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় মামলা করে। মামলার তদন্তে নেমে প্রথমে মধ্য বাড্ডা থেকে চক্রের মূলহোতা শান্তকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে শহীদকে গ্রেফতার করা হয়। তারা একটি বাসায় বেশিদিন থাকত না। 

এসআই অনিক আরও বলেন, শান্ত এক আইনজীবির সাদা রংয়ের প্রোবক্স মডেলের একটি গাড়ি ৫০/৫০ শেয়ারে উবার চালাতো। পাশাপাশি ওই আইনজীবীকে কোর্টে আনা নেওয়া করত শান্ত। আর বাকি সময় সে উবারে গাড়ি চালাত। এই গাড়ি চালানোর আড়ালে শান্ত ও তার সহযোগিরা মিলে তরুণী অপহরণ, ধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মতো অন্যায় করে আসছে। পুলিশ জানায়, টার্গেট ঠিক করে দিত শান্তর সহযোগী শহীদ। একাকী চলা কোনো মেয়েকে দেখলে শান্তকে জানাতো। এরপর শান্ত তুলে নেওয়ার পরে দুজনে মিলে ধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায় করত।

এস আই অনিক আরও বলেন, শান্তর বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ছয়টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তার মধ্যে তিনটি অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায়। বাকি তিনটি অপহরণ ও গণধর্ষণের ঘটনায়। তার এই সিরিয়াল অপহরণ ও গণধর্ষণের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বর্তমানে শান্ত কারাগারে রয়েছে। দু একদিনের মধ্যে কারাগার থেকে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এ দিকে মোহাম্মদপুর থানার একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উবার চালকের ছদ্মবেশে শান্ত মেয়েদের গাড়িতে তুলে অপহরণ করতেন। পরবর্তীতে গাড়ির ভেতরেই ধর্ষণ করতেন। ছেড়ে দেওয়ার আগে পরিবারকে ভুক্তভোগীদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করতো। মোহাম্মদপুর ছাড়াও একই কায়দায় ধানমন্ডি ও মিরপুর এলাকায় একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে শান্ত। শান্তর মোবাইল ফোন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের তথ্যের সূত্র ধরে বেশ কিছু ভুক্তভোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে অনেক দিন আগের ঘটনা হওয়ায় অনেক ভুক্তভোগী নতুন করে মামলা করতে চান না।

কর্মকর্তারা আরও জানান, শান্তর মূলত টার্গেট পার্ক ও বিভিন্ন আবাসিক হোটেল থেকে বের হওয়া অল্প বয়সী কিশোরী ও তরুণীরা। তারা মূলত পরিবারের অজান্তে নানা ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। ফলে শান্ত এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে তাদের কে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপহরণ করতেন। এরপর রাস্তায় বসেই ধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিতেন শান্ত ও তার সহযোগীরা।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  কিশোরী ও তরুণী   ধর্ষণ  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত