চট্টগ্রাম নগরীতে "মধু হৈ হৈ" গানের তালে তালে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে এক যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে সিএমপি'র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গান গেয়ে গেয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার মূলহোতা ফরহাদ প্রকাশ জুয়েল (৪২), মোঃ সালমান (১৬) এবং আনিসুর রহমান ইফাত (১৯)-কে গ্রেফতার করেছে পাঁচলাইশ মডেল থানা পুলিশ৷
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ২১ আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ভাইরাল হয়। সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিও'র সুত্র ধরে গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় "চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ” নামে একটি হোয়াটস এপ গ্রুপ শনাক্ত করা হয়। সেই গ্রুপটির আ্যাডমিন ও হত্যাকান্ডের মূলহোতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী প্রকাশ জুয়েল (৪২)-কে শনাক্ত করা হয়।
পরে গোপন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পাঁচলাইশ থানার একটি টিম গতকাল (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় ২নং গেইট সংলগ বিপ্লব উদ্যান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েলকে আটক করে৷ ভিডিও ফুটেজে মৃতপ্রায় শাহাদাতের গাল চেপে ধরে “এ ভাইয়া সবাই একটা একটা সেলফি তুলে চলে যান ” বলা কিশোর মোঃ সালমান (১৬)-কে শনাক্ত করা হয়৷ পরে সন্ধ্যায় তাকে সিএমপি'র চকবাজার থানাধীন শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে আটক করা হয়৷
আটক জুয়েল ও মোঃ সালমানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে "চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ" টির সক্রিয় সদস্য এবং হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে নগরীর ২নং গেইট সংলগ্ন মসজিদ গলি থেকে আনিসুর রহমান ইফাত (১৯)-কে আটক করা হয়৷ আটক জুয়েল ইট-বালি সরবরাহের কাজ করেন৷
তিনি "চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ" নামের গ্রুপটি তৈরী করলেও সেই গ্রুপটির সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়৷
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, নিহত শাহাদাতের বিরুদ্ধে নগরীর কোতয়ালি থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে৷ তবে তিনি এই হত্যাকান্ডকে মব জাস্টিস নয় বরং মব ইন জাস্টিস বলে আখ্যা দেন৷ পাঁচলাইশ মড়েল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, ঘটনার সাথে আরো অন্তত ২০ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ১৩ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০ টা থেকে ১৪ আগস্ট রাত দেড়টার মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ২ নং গেইটস্থ ট্রাফিক চত্বরে ছিনতাইকারী সন্দেহে গান গেয়ে গেয়ে ট্রাফিক পোস্টের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভিকটিম মোঃ শাহাদাত হোসেন (২৪)-কে। হত্যার পর অপকর্ম গোপন করার জন্য গত ১৪ আগস্ট (১৩ আগস্ট দিবাগত) রাতের অন্ধকারে মৃত শাহাদাতকে পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন বদনাশাহ মাজার সংলগ্ন রাস্তার সামনে ফেলে চলে যায়।
পাঁচলাইশ মডেল থানা পুলিশ ওইদিন সন্ধ্যা ৭টায় শাহাদাতের লাশ উদ্ধার করে লাশের ময়নাতদন্ত সমাপ্ত করে তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। পরে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এজাহারের প্রেক্ষিতে পাঁচলাইশ মডেল থানার গত ১৫ আগস্ট ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা নং- ১৩ রুজু করা হয়