শুক্রবার মধ্যরাত, রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি এলাকা। সেখানে নিয়মিত বিচরণ করা অবলা প্রাণীগুলো হয়তো বুঝতেই পারেনি, আজই তাদের জীবনের শেষ রাত। সেখানকার কুকুরগুলো যখন মানুষের লাঠির আঘাত খেয়ে অভ্যস্ত, সেই কুকুরগুলোই ভয় ভেঙে, বিশ্বাস করে এগিয়ে গিয়েছিল সেই মানুষেদের কাছে। বলে রাখা ভালো, কুকুর কারও বিশ্বাস না ভাঙলেও সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ সেই কুকুরগুলোর বিশ্বাস ভেঙে দেয়, খাবারের লোভে ডেকে এনে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলে সেই অবলা প্রাণীদের, বাদ যায়নি একটি বিড়ালও।
বেওয়ারিশ প্রাণী, বিশেষ করে শহরে ক্ষুধার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেঁচে থাকার জন্য মানুষের সদিচ্ছার উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। না জেনে তারা যে (বিষাক্ত) খাবার খেয়েছিল সেটি তারা নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যই খেয়েছিল— কিন্তু মনুষ্যজাতির চরম বিশ্বাসঘাতকায় কে জানতো সেটিই তাদের জন্য শেষ খাবারে পরিণত হবে।
এমন ঘটনায় বাংলাদেশে বেওয়ারিশ প্রাণীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো উদ্বিগ্ন। সমাজে যেখানে কুকুর-বেড়ালের মতো প্রাণীদের উপদ্রব মনে করা হয় এবং ঘৃণার চোখে দেখা হয়, সেখানে এমনও অনেক মানুষ আছেন যারা কিনা এই অসহায় প্রাণীদের যত্নে নিজের সামান্য পকেট খরচটুকু ব্যয় করতেও পিছপা হন না।
নিরীহ প্রাণীদের এভাবে বিষ প্রয়োগে শুধু নিষ্ঠুরতাই নয়, বরং চরম হীন মানসিকতার পরিচয় বহন করে। যেখানে ক্ষমা একটি মহৎ গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়, সেখানে এমন ঘৃণ্য সহিংসতা আমাদেরকে পশু অধিকার রক্ষায় কঠোর হতে বাধ্য করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে আর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেন।
প্রাণী অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠনের একজন সদস্য কাশফিয়া নিশা জানান, ময়নাতদন্তের জন্য কুকুর-বেড়ালগুলোর মরদেহ সংরক্ষণ করা হলেও ইতোমধ্যেই কিছু মরদেহ সরিয়ে ফেলেছেন জাপান গার্ডেন সিটির স্থানীয় বাসিন্দারা। বেওয়ারিশ প্রাণীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো আজ বিকালে মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি অভিমুখে পদযাত্রা নিয়ে প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে মানববন্ধন করবে বলে জানান তিনি।
প্রাথমিকভাবে আদাবর থানায় যাওয়ার পর তেমন একটা গুরুত্ব না পেলেও, তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনাস্থলে আসার পর বিস্তারিত শুনে এ ঘটনাকে 'মর্মান্তিক' আখ্যা দিয়ে সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ ঘটনাটি আমাদের সকলের জন্য একটি ওয়েক-আপ কল হিসাবে কাজ করবে- যাতে মানুষ হোক বা পশু, আমরা আমাদের সমাজের নিরীহদের প্রতি আগামীতে কেমন আচরণ করব সেটি নির্ধারণ করে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের অভিজাত আবাসিক এলাকা জাপান গার্ডেন সিটিতে বেওয়ারিশ কুকুরের দৌরাত্ম বেড়েছে বলে অভিযোগ। ফলে সেখানকার বাসিন্দারা এসব প্রাণিদের প্রতি একরকম তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে সেখানকার বাসিন্দারা কুকুরের প্রতি বিভিন্ন অভিযোগ এনে পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যায়, সেখানকার শিশুদের কুকুর কামড়েছে বলে অভিযোগ আনা হচ্ছে। এমন অবস্থায় জাপান গার্ডেন সিটি বাসির পক্ষ থেকে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বহু আগেই। সম্প্রতিই তা ঘটানো হয়েছে। এর ফলে বেশ সংখ্যক কুকুরকে মেরে ফেলেছে জেজিসি লাইফ সোসাইটি নামের একটি টিম। এ ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রাণীপ্রেমিরা।