বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন EC4J প্রকল্পের যৌথ আয়োজনে আগামী ২২ ও ২৩ মে ২০২৫ তারিখে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে (Showcasing and Sourcing Show on Plastic Toy Industries of Bangladesh) টয় এক্সপো।
এ প্রদর্শনীতে দেশের খেলনা শিল্পের উদ্যোক্তারা তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবনী পণ্য এবং প্রযুক্তি উপস্থাপন করবেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রেতা, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং খাত সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সোর্সিং ও নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম।
পল্টনে ইআরএফ হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বর্ণনা করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশন (বিপিজিএমএ) এর নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আগামী ২২ মে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও EC4J প্রকল্পের পরিচালক মোঃ আব্দুর রহিম খান এবং যুগ্ম সচিব ও ডেপুটি প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-এর সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট ও EC4J প্রকল্পের টিম লিডার হোসনেয়ারা ফেরদৌস সুমি । প্রদর্শনীতে শিল্প খাতের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন।
বর্তমানে দেশের খেলনা শিল্প দ্রুত বিকাশমান একটি খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আনুমানিক ৭,০০০ কোটি টাকার বাজারে দেশীয় নির্মাতারা প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার চাহিদা পূরণ করছেন। মাত্র এক দশক আগেও যেখানে ৯০ শতাংশ খেলনা আমদানি নির্ভর ছিল, বর্তমানে ৯০ শতাংশ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এই শিল্পে বর্তমানে প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে এবং আগামী কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশাবাদী উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী শ্রমিক। খেলনা রপ্তানি আয় বর্তমানে ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
টয় এক্সপো উপলক্ষে বিপিজিএমইএ সরকারের প্রতি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—খেলনা শিল্পে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরী আধুনিকায়ন, পণ্য বহুমুখীকরণে সরকারী সহায়তা, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা অর্জনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং একটি পূর্ণাঙ্গ প্লাস্টিক শিল্প নগরী স্থাপন। চীন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হলে বাংলাদেশকেও প্রযুক্তিগত দিক থেকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
বিপিজিএমইএ আরও জানিয়েছে, খেলনা একটি উদ্ভাবনী পণ্য হওয়ায় পেটেন্ট ও ডিজাইন রেজিস্ট্রেশন গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ২০৩৮টি খেলনা পণ্যের পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এ খাত থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারী কোষাগারে রাজস্ব এসেছে প্রায় ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। উদ্যোক্তাদের সুরক্ষায় এবং উদ্ভাবনী পণ্য সংরক্ষণের জন্য পেটেন্ট সিস্টেমকে আরও সহজ ও কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সবশেষে, বিপিজিএমইএ মনে করে যে, এই টয় এক্সপো কেবল একটি প্রদর্শনী নয়, বরং এটি দেশের খেলনা শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উপস্থাপনের এক অনন্য উদ্যোগ। এই আয়োজনে দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা যেমন নতুন বাজার খুঁজে পাবেন, তেমনি খেলনা খাত দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অংশগ্রহণ এবং সরকারের নীতিগত সহায়তা থাকলে খেলনা শিল্প হবে বাংলাদেশের রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি।