বুধবার ২৫ জুন ২০২৫ ১১ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ২৫ জুন ২০২৫
স্বাদের স্বর্ণখনি: শ্রীমঙ্গলের আনারস
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫, ৭:২৫ PM
শ্রীমঙ্গলের কথা বললেই চোখে ভাসে সবুজে মোড়ানো চা-বাগান,  নিবিড় বন আর পাহাড়ঘেরা রূপকথার মতো প্রকৃতি। তবে এই সবুজ রাজ্যে আরেকটি স্বাদ ও অর্থনীতির রত্ন আছে, যার নাম আনারস। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও উর্বর ভূমির এক অনন্য মেলবন্ধন এ আনারসকে দিয়েছে স্বকীয়তা, স্বাদ আর সুবাসে অনন্যতা।

শ্রীমঙ্গলের আনারস মূলত: গায়ে সোনালি হলুদ রঙ, গন্ধে মিষ্টি তীব্রতা এবং স্বাদে রসে ভরপুর ও কোমলতা। আকারে মাঝারি হলেও খোসার নিচে যে স্বাদ লুকিয়ে থাকে, তা একবার চেখে দেখলেই বোঝা যায় কেন শ্রীমঙ্গলের আনারসের এত খ্যাতি।

চাষের সময় মে থেকে আগস্ট। তবে জুন-জুলাইতে আনারসের মৌসুম যেন প্রকৃতির উৎসব হয়ে ওঠে। শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি অঞ্চলসহ বিস্তৃর্ণ জমিতে আনারস চাষ হয়ে থাকে। কৃষি অফিস জানায়, বর্তমানে শ্রীমঙ্গলের ৪১৫ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়। এরমধ্যে ৩৩৫ হেক্টর জমিতে হানিকুইন এবং ৭৫ হেক্টর জমিতে জায়েন্ট কিউ জাতের চাষ হয়। এছাড়াও ফিলিপাইন থেকে আনা এমডি-২ চারা দিয়ে ৫ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে।  পরিক্ষামুলক আনারসের এ চাষও সফল হতে চলেছে। শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত হাজার হাজার টন আনারস এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। শ্রীমঙ্গলে আনারসের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এ বছর ৬ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন।

টিলায় টিলায় সোনালী আনারসের সারি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। অনেক পর্যটক সরাসরি বাগান থেকে আনারস কিনে খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে আসেন। ফলে এটি গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে। শ্রীমঙ্গলের পর্যটনের সঙ্গে আনারস বাগান ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হতে পারে। অনেক পর্যটকই এখন চা-বাগান ছাড়াও আনারস বাগান ঘুরে দেখতে চান, যেখানে প্রকৃতির রূপ আর কৃষির ঘ্রাণ মিলে তৈরি হয় এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। চাইলেই এখানে আয়োজন করা যায় ‘আনারস উৎসব’, যেখানে থাকবে স্থানীয় কৃষকদের স্টল, আনারস দিয়ে তৈরি খাবার ও কৃষিভিত্তিক পর্যটন।

এছাড়া ভবিষ্যতে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলে শ্রীমঙ্গলের আনারস আন্তর্জাতিক বাজারেও পরিচিত হতে পারে। এছাড়া সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে পৃষ্টপোষকতা পেলে শ্রীমঙ্গলের আনারস ‘প্রিমিয়ার ফ্রুট' হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে। 
 
তবে এই সম্ভাবনার পথ একেবারেই মসৃণ নয়। চ্যালেঞ্জ আছে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা দুর্বল, প্রক্রিয়াজাতকরনের অভাব, উৎপাদনের সময় দাম পড়ে যাওয়া, আর কিছু এলাকায় এখনো আধুনিক চাষপদ্ধতি ব্যবহার হয় না। প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের চারা, সরকারি সহায়তা এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের যুক্ত করা গেলে এই সমস্যাগুলো সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব।

এটি শুধু একটি ফল নয়, বরং একটি সম্ভাবনা। এটি এখানকার সংস্কৃতি, কৃষি, পর্যটন, অর্থনীতি ও পরিচয়ের অংশ। সঠিক পরিকল্পনা আর পৃষ্ঠপোষকতায় এটি হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম ব্র্যান্ড পণ্য। তাছাড়া জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন, আনারসভিত্তিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প, এগ্রো-ট্যুরিজম ও রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। যথাযথ পৃষ্টপোষকতা ও বিপননের মাধ্যমে শ্রীমঙ্গলের আনারস আন্তর্জাতিক বাজারেও একটি পরিচিত ব্রাণ্ডে রূপ নিতে পারে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত