নীলফামারীর সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় কর্মচাঞ্চল্য। কেউ বাস ধোয়ার কাজে ব্যস্ত, কেউ গাড়ির যন্ত্রাংশ ঠিক করছেন, আবার কেউ যাত্রী ডাকছেন। এই টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক জেলা ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল করে।
বাসের হেলপার জাবেদ আলী (৫২) ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে এই পেশায় যুক্ত। তিনি জানালেন, হেলপারি করে যে আয় হয়, তা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া কঠিন। স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকা সত্ত্বেও পরিবার চালাতে ধার-দেনা করতে হয়।
অন্য বাসচালক মনোয়ার হোসেন স্কুলবেলা থেকে পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় পরিশ্রমের পরও পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানো কঠিন। দৈনিক আয় সাধারণত ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা হলেও বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
বাস শ্রমিকরা দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করেন। দীর্ঘ সময় রাস্তায় থাকার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি, ক্লান্তি, চোখ ও পিঠে ব্যথা, ফুসফুসজনিত রোগ, কাঁশি ও মানসিক চাপের মতো সমস্যা দেখা দেয়। দুর্ঘটনায় আহত হলেও অনেকেই নিজ খরচে চিকিৎসা করান।
নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, শ্রমিকদের খোঁজখবর রাখা হলেও সীমিত সামর্থ্যের কারণে সবাইকে সহায়তা করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থাকলে বাস শ্রমিকদের জীবন কিছুটা স্বস্তির হতো।
বাস শ্রমিকরা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে দীর্ঘ সময় পরিশ্রম ও কম মজুরির কারণে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। পারস্পরিক সম্মান, ধৈর্য ও সচেতনতা ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।