দেশের ট্রাভেল ও পর্যটন খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আজ রাজধানীর সাঙ্গু ব্যাংকোয়েট হলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন আটাব, হাব এবং বায়রার সাধারণ সদস্যরা। এতে সভাপতিত্ব করেন আটাবের সাবেক সভাপতি এস. এন. মঞ্জুর মোর্শেদ (মাহবুব)।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন— “আপনারা অতীতে আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আজ দেশের লক্ষাধিক ট্রাভেল কর্মীর ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে আমরা আবার আপনাদের সহায়তা চাই।”
সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয় যে, গত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (OTA)— সাধারণ গ্রাহকের টাকা, ছোট ট্রাভেল এজেন্সির অগ্রিম অর্থ, অনলাইন টিকেটিং বাবদ প্রাপ্ত কমিশন —মোট মিলিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মালিকসহ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।
এ বিষয়ে আটাব–হাব–বায়রা আগেই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করে জানিয়েছিল— নিয়মনীতি প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত অনলাইন ট্রাভেল কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত রাখা হোক। কিন্তু মন্ত্রণালয় তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে প্রতারক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে দেশত্যাগ করতে পেরেছে। সাম্প্রতিক পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে— ভিসা ব্লক, ট্রাভেল ব্যান, আর্থিক তদন্ত, সম্পদ জব্দ —কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ট্রাভেল সংগঠনগুলো দাবি করেছে—অনলাইন প্রতারণার দায় মন্ত্রণালয় এখন সাধারণ ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।
এর অংশ হিসেবে ২০১৩ সনের ৬১ নং ট্রাভেল এজেন্সি আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ–২০২৫ এর খসড়া তৈরি করেছে, যা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি ট্রাভেল এজেন্সিকে দেউলিয়া করবে, হজ ও ওমরাহ সেক্টরকে অস্থিতিশীল করবে, দেশের পর্যটন শিল্পের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধাক্কা দেবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
প্রায় ৬০০০ ট্রাভেল এজেন্সি, ১৪০০ হজ ও ওমরাহ এজেন্সি, ২৭০০ রাউটিং ও সাব–এজেন্ট প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও লক্ষাধিক কর্মচারী, পরিবহন ব্যবস্থাপক, টিকেটিং অফিসার, মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, হজ ব্যবস্থাপনা কর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়বে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন— “এটি দেশের ৮০% ট্রাভেল এজেন্সির জন্য সরাসরি মৃত্যুঘণ্টা।” ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এত বড় পরিমাণ জামানত দিতে পারবেন না।
যদি পরিবারের কারও নামে ট্রাভেল এজেন্সি থাকে, তবে— NID, পাসপোর্ট, ব্যাংক তথ্য, নিবন্ধন নম্বর, সব বিস্তারিত জমা দিতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন— এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং অপ্রয়োজনীয় হয়রানির শামিল।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলো প্রতিবছর পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট জমা দিতে বাধ্য থাকবে। রিপোর্ট সন্তোষজনক না হলে— ট্রেড লাইসেন্স নিবন্ধন, নবায়ন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটি এজেন্সি ব্যবসাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলবে।
আগের আইনে শাস্তি ছিল— ৬ মাস কারাদণ্ড ৫ লাখ টাকা জরিমানা। নতুন সংশোধনীতে করা হয়েছে— ৩ বছর কারাদণ্ড ৫০ লাখ টাকা জরিমানা
ব্যবসায়ীদের মতে— “এটি ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে চুপ করানোর প্রচেষ্টা।”
যদিও অনেক ছোট এজেন্সি বড় এজেন্সির সাব–এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে, এই ধারা কার্যকর হলে— রাউটিং এজেন্ট, সাব–এজেন্ট, হোলসেলার এজেন্ট- সবাই ব্যবসা হারাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আটাব–হাব–বায়রার নেতারা বলেন, “আমরা আইন বিরোধী নই। কিন্তু অন্যায় আইন ব্যবসা ধ্বংস করে দেবে। প্রথমে সংলাপ, পরে সিদ্ধান্ত—এটাই ন্যায়সঙ্গত।”
তারা দাবি করেন— নতুন আইন করার আগে স্টেকহোল্ডারদের (ATAB–HAB–BAIRA) সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অনলাইন ট্রাভেল প্রতারকদের ধরতে হবে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
নেতারা বলেন— খসড়া অধ্যাদেশ–২০২৫ বাতিল করুন, পর্যটন খাতের হাজারো মানুষের জীবন–জীবিকা রক্ষা করুন, অনলাইন প্রতারণার বিরুদ্ধে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করুন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ধ্বংস করা যাবে না, পর্যটন শিল্পকে সহায়ক নীতিমালা দিন।
শেষে এস. এন. মঞ্জুর মোর্শেদ (মাহবুব) বলেন, “এই দেশে পর্যটন শিল্প টিকে আছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ওপর। আপনারা যদি তাদের নিঃশেষ করেন—পর্যটন খাত থেমে যাবে। আমরা সংঘাতে যেতে চাই না; সংলাপে সমাধান চাই।”
সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ জানান— “নতুন আইন যেন ব্যবসা ধ্বংসের হাতিয়ার না হয়; বরং একটি টেকসই, নিরাপদ ও ন্যায্য ভ্রমণ শিল্প গড়ার সুযোগ তৈরি করে।”