রবিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৫
গেজেট প্রকাশের আগেই অধ্যাদেশ বাতিলের আহবান, অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:২৮ PM

ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিল চায় আটাব সদস্য কল্যাণ ঐক্য জোট। অনতিবিলম্বে এই অধ্যাদেশ বা‌তিল না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁ‌শিয়া‌রি দিয়েছে সংগঠনটি। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থে‌কে এই হুঁ‌শিয়া‌রি দেওয়া হয়। 

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের আইন এবং ২০২১ সালের সংশোধনী আইনের পরিবর্তন করে নতুন যে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে, তা বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে মালিক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা পুরো খাত এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

বক্তারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে কোনো খাতে অধ্যাদেশ জারি করা হলে তা সাধারণত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে আলোচনা করে আইন সংশোধন করা অধিক গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক হবে।  

পাঁচ হাজার নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ভবিষ্যৎ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অধ্যাদেশটি বাতিলের আহ্বান জানান সংগঠনের নেতারা।

আটাব সদস্য কল্যাণ ঐক্য জোটের আহ্বায়ক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন টিপু বলেন, নতুন অধ্যাদেশে যেসব সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে, তার অনেকগুলো বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বিশেষ করে ধারা ৫-এ অন্য এজেন্সির কাছ থেকে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করলে সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সিগুলো টিকে থাকতে পারবে না। দেশে যে পাঁচ হাজার এজেন্সি আছে, তাদের অধিকাংশেরই এয়ারলাইন্স থেকে সরাসরি টিকিট ইস্যুর সক্ষমতা নেই। আর অনলাইন ও অফলাইনের জন্য যে ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা জামানত রাখার কথা বলা হয়েছে, তা ছোট এজেন্সিগুলোর পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, অধ্যাদেশের ধারা ৯-এ পরিবারের বাইরে ব্যবসা হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা, এক ঠিকানায় রিক্রুটিং এজেন্টের কার্যক্রম সীমিত করা এবং বিনা শুনানিতে লাইসেন্স স্থগিত করার মতো বিধানগুলো খাতটিকে অকার্যকর করে দেবে। দেশের প্রচলিত আইনেই একই ঠিকানায় একাধিক ব্যবসার লাইসেন্স বৈধ। বহু রিক্রুটিং ও হজ এজেন্সি দীর্ঘদিন ধরে টিকিট সেবা দেওয়ার জন্য একই অফিস থেকে ট্রাভেল ব্যবসা পরিচালনা করছে।

সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ জুমান চৌধুরী বলেন, এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, পরিবারের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক গ্যারান্টি সীমিত থাকার কারণে তারা বড় এজেন্সি থেকে টিকিট সংগ্রহ করে গ্রাহকদের সেবা দেন। এটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানানো হলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের আইনে নির্ধারিত শাস্তি সংসদীয় যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে পাস হয়েছিল। সেটিকে হঠাৎ করে তিন বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব অযৌক্তিক। যেকোনো অপরাধের বিচার দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই সম্ভব। আলাদা করে অতিরিক্ত কঠোর শাস্তির প্রয়োজন নেই।

আটাবের সাবেক মহাসচিব আসলাম খান বলেন, ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ এটা বাতিল করতে হবে। আমরা সরকারের কাছে যে দা‌বি, সেটা জানাচ্ছি; ন্যায্য এ দা‌বি মানতে হবে।

মানববন্ধন শেষে আটাব সদস্য কল্যাণ ঐক্য জোটের আহ্বায়ক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ে কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।

স্মারকলিপিতে তারা ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ২০২৫ (সংশোধন)-এর অনুমোদিত খসড়া বাতিলের অনুরোধ জানানো হ‌বে।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে যাবে, যার ফলে মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়বে এবং খাতটি মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হবে।

স্মারকলিপিতে অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারা ও উপধারার অসংগতি, অযৌক্তিক আর্থিক শর্ত, অন্য এজেন্সির কাছ থেকে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ, লাইসেন্স হস্তান্তর সীমাবদ্ধতা, রিক্রুটিং এজেন্টদের অফিস পরিচালনায় বাধা, অতিরিক্ত শাস্তির বিধানসহ একাধিক বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

স্মারকলিপি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংগঠনের আহ্বায়ক যে আহ্বান জানাবেন, সেটি তুলে ধরে মানববন্ধনে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে অধ্যাদেশ না এনে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে আইন সংশোধন করা হলে তা হবে অধিক যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য।

প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানাবে, গেজেট প্রকাশের আগেই অনুমোদিত খসড়া বাতিল করে খাতটির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য।







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত